Tuesday, July 7, 2015

শবে কদর শুধুই কি রমাযানের শেষ দশকের কোন এক বিজোড় রাতে?

শবে কদর শুধুই কি রমাযানের শেষ দশকের কোন এক বিজোড় রাতে?


                                               বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

(১) আমি এ (কুরআন) নাযিল করেছি কদরের রাতে।

(২) তুমি কি জানো, কদরের রাত কি?

(৩) কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও বেশী ভালো।

(৪) ফেরেশতারা ও রূহ এই রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে নাযিল হয়।

(৫) এ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময় ফজরের উদয় পর্যন্ত।

শুধুমাত্র একটা রাতকে কেন্দ্র করে নাযিল হওয়া একটা সম্পূর্ণ সূরা, সূরা কদরই বলে দেয় শবে কদরের গুরুত্ব কতখানি।

আলহামদুলিল্লাহ্‌, বলতে গেলে আমরা কেউই শবে কদরের মর্যাদা ও ফযীলত সম্পর্কে কম ওয়াকিবহাল নই। অতএব, এ রাতের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হওয়াটা হবে নিতান্তই এক দুর্ভাগ্য।

প্রশ্ন হচ্ছে, শবে কদর আসলে কবে? বুখারী ও মুসলিমের হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন,

আমাকে শবে কদর দেখানো হয়েছিল; কিন্ত পরে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে তা অনুসন্ধান কর।

সে হিসাবে, আমরা বেশিরভাগই ধরে নিই যে, ২১, ২৩, ২৫, ২৭ এবং ২৯ রমাযানের যে কোন এক রাতে শবে কদর।

তবে আমরা যদি সালাফদের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব যে, অনেকেই ব্যাখ্যা করেছেন যে শুধু বিজোড় রাত নয়, যে কোন জোড় রাতেও শবে কদর হয়ে যেতে পারে!

শবে কদরের হাদীসগুলো নিয়ে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ্‌র ব্যাখ্যাটা সত্যিই আকর্ষণীয়।

"আলহামদুলিল্লাহ্‌, নিশ্চয়ই রমাযানের শেষ দশকের কোন এক রাত হচ্ছে শবে কদর। আর এ রাতটি হচ্ছে কোন এক বিজোড় রাত, যেভাবে সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।

আর সাধারণতঃ এই বিজোড় রাতটা ২১, ২৩, ২৫, ২৭ এবং ২৯ রমাযানের যে কোন এক রাতে ধরে নেওয়া হয়।

কিন্ত রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত অন্য একটা হাদীস থেকে জানা যায় যে,

রমাযানের (শেষ দশকের) অবশিষ্ট নবম রাতে, অবশিষ্ট সপ্তম রাতে, অবশিষ্ট পঞ্চম রাতে এবং অবশিষ্ট তৃতীয় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান কর। (আবু দাউদ, তিরমিযী; শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ্‌ সহীহ সুনান আত-তিরমিযীতে "সহীহ" বলেছেন)

এ হাদীস থেকে আমরা দেখতে পারি যে, যদি কোন রমাযান মাস ৩০ দিনের হয়, তাহলে অবশিষ্ট নবম রাতটা হবে ২২ রমাযানের রাত, অবশিষ্ট সপ্তম রাতটা হবে ২৪ রমাযানের রাত, অবশিষ্ট পঞ্চম রাতটা হবে ২৬ রমাযানের রাত এবং অবশিষ্ট তৃতীয় রাতটা হবে ২৮ রমাযানের রাত! আর এভাবেই আবু সাঈদ আল-খুদরী রাযিআল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শবে কদরের রাত সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন।

অন্যদিকে, যদি কোন রমাযান মাস ২৯ দিনের হয়, তাহলে উক্ত হাদীস অনুযায়ী শবে কদরের রাত পড়বে শেষ দশকের বিজোড় তারিখের রাতগুলোর যে কোন এক রাতে।

অতএব, মুমিনের উচিত, রমাযানের শেষ দশ রাতের প্রতিটি রাতেই শবে কদরের অনুসন্ধান করা।"

(মাজমু-উল ফাতওয়া, ২৫/২৮৪-২৮৫)

এখানে একটা ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয়।

আমরা জানি যে, শবে কদরে আল-কুরআন লাওহে মাহযূয থেকে প্রথম আসমানে নাযিল হয় (যা শবে কদর আর রমাযান মাস, উভয়েরই উচ্চ মর্যাদা আর ফযীলতের কারণ)। ওয়াসিলাহ্‌ ইবনুল আসক্বা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে,  রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

ইব্রাহিমের মুসহাফ নাযিল হয়েছিল রমাযানের প্রথম রাতে। তাওরাত নাযিল হয়েছিল রমাযানের ষষ্ঠ রাতে। ইনযীল নাযিল হয়েছিল রমাযানের ত্রয়োদশ রাতে, আর যাবূর নাযিল হয়েছিল রমাযানের অষ্টাদশ রাতে, এবং আল-কুরআন নাযিল হয়েছিল রমাযানের ২৪তম রাতে। (ত্বাবারানী, বায়হাকী; শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ্‌ সহীহুল জামি বইয়ে "হাসান" বলেছেন)

শবে কদর শুধুমাত্র যদি রমাযানের শেষ দশকের বিজোড় তারিখের কোন রাত হয়, তাহলে এই হাদীসের সাথে তা সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। অন্যদিকে, ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ্‌ যে শবে কদরের রাতের সবগুলো হাদীস একত্র করে যে ব্যাখ্যাটা দিয়েছেন, তার সাথে এই হাদীসের বর্ণনার কোন সংঘর্ষ পরিলক্ষিত হয় না।

অতএব, শবে কদর যেন আমাদের হাত থেকে ছুটে না যায়, তাই আমাদের উচিত যে রমাযানের শেষ দশ রাতের প্রতিটি রাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। কারণ এখন স্পষ্ট, শুধুমাত্র বিজোড় তারিখের কোন এক রাত, বরং শেষ দশকের যে কোন এক রাতই শবে কদর, বিজোড় হোক বা জোড়।

মূল পোস্টঃ https://www.facebook.com/auatthahabi/photos/a.446790162126174.1073741828.219268411545018/556577884480734/?type=1

Courtesy: Dr. Shaykh Abid.

প্রাসঙ্গিকঃ

লাইলাতুল ক্বদরের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন হারাম শরীফের ইমাম শায়খ মাহের আল মুয়াইক্বালি
.
১। রমাদ্বানের শেষ ১০ রাতের প্রতি রাতে অন্তত ১টাকা করে দান করুন, যাতে সেই রাত লাইলাতুল ক্বদর হলে প্রতিদিন ১ টাকা করে একটানা ৮৪ বছরেরও অধিক দান করার সওয়াব হয়
.
২। রমাদ্বানের শেষ ১০ রাতের প্রতি রাতে অন্তত ২ রাক'আত নফল সালাত পড়ুন, যাতে সেই রাত লাইলাতুল ক্বদর হলে প্রতিদিন দুই দুই করে একটানা ৮৪ বছরেরও অধিক নফল সালাতের সওয়াব হয়
.
৩। রমাদ্বানের শেষ ১০ রাতের প্রতি রাতে ৩ বার সূরাহ ইখলাস পড়ুন, যাতে সেই রাত লাইলাতুল ক্বদর হলে প্রতিদিন একবার করে ৮৪ বছরেরও অধিক খতমের সওয়াব হয়।
.
এরপর তিনি উপদেশ দিয়েছেন এইকথা ছড়িয়ে দিতে যাতে আমলকারীর আমলের সওয়াবের অংশ পাওয়া যায়।

No comments:

Post a Comment