আলেমরা প্রতিবাদ সহ্য করে না। মসজিদে কাউকে কথা বলতে দেয় না। ভুল বলবে; কোন সংশোধন নয়।
তাহলে কি এরা পথ থেকে সরে গেছে।
.
.
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কখনো এমন মনোভাব ছিলো না। তারা নিজেদের ভুল ও অন্যায়ের প্রতিবাদ তো মেনে নিতেনই, উপরন্তু এমনও অনেক ঘটনা আছে যে, প্রতিবাদকারী প্রকৃত তথ্য জানতে না পেরে জনগণের সম্মুখে ভুল প্রতিবাদ করেছেন আর খলীফাতুল মুসলিমীন অত্যন্তু ধৈর্যসহকারে সে প্রতিবাদের জবাব দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রা.-এর জীবনের দু‘টি ঘটনা এখানে তুলে ধরছি-
এক. একবার তিনি বিবাহে অধিক মহর ধার্য করার বিপক্ষে সাহাবায়ে কেরামের মজলিসে বক্তব্য রাখছিলেন। হঠাৎ একজন মহিলা দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করলেন। বললেন থামুন, হে উমর! আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দিচ্ছেন আর আপনি আমাদেরকে বঞ্চিত করছেন ? পবিত্র কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতের মাধ্যমে তিনি অধিক মহর ধার্য করার বৈধতার পক্ষে প্রমাণ দিলো-
‘তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির কর এবং একজনকে অগাধ অর্থও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই প্রতিগ্রহণ করো না’ ।
মহিলার উচ্চারিত আয়াত শুনে উমর রা. যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন তা চির শিক্ষণীয় হয়ে আছে। তিনি তখন বলে ওঠেন : ‘এক নারী সঠিক বলেছে আর এক পুরুষ ভুল করে ফেলেছে ’।
দুই. একদিন নতুন জুব্বা পরিহিত হয়ে মসজিদে খুতবা দিতে দাঁড়িয়েছেন হযরত উমর রা.। এমন সময় এক ব্যক্তি প্রতিবাদ করে ওঠেন এবং এ মর্মে প্রশ্ন ছুড়ে দেন যে, গনীমতের মাল থেকে সবাইকে এক একটি করে চাদর দেয়া হয়েছে। জুব্বা তৈরির জন্য তো দু‘টি চাদরের প্রয়োজন। তাহলে আপনি দু‘টি চাদর পেলেন কী করে ? খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর রা. প্রশ্নকারীকে ধমক না দিয়ে তার প্রশ্নের জবাব দিলেন। তিনি জবাবে বললেন : তাঁর ছেলে ইবনে উমরের চাদরটিও সে তাকে দিয়ে দিয়েছে বিধায় উমর রা. দুই চাদরের অধিকারী হয়েছে এবং জুব্বা বানাতে সক্ষম হয়েছে।
প্রিয় বন্ধুরা! দেখুন, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কী চমৎকার বিনয় ও জবাবদিহিতার মনোভাব ছিল। তাদের কথা-বার্তা, বিনয় এবং সত্যপ্রিয়তার মধ্যে মানুষ আদর্শ খুঁজে পেতো এবং ইসলামের পথে উদ্বুদ্ধ হতো।
পক্ষান্তরে বর্তমানে আমরা অনেকেই আছি, কোন অভিযোগ বা আপত্তির মুখোমুখি হলে বলি- ‘আমার ব্যাপারে আপনি এমন ধারণা করতে পারেন ? আমি কি এমন মানুষ? আমাদের সততার প্রতি কি আপনার আস্থা নেই ? ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার প্রশ্নকারীকেই কঠোরভাবে জব্দ করে ছাড়েন। অভিযোগটি সঠিক কি-না সে প্রশ্ন তার কাছে কোন গুরুত্বই রাখে না বিধায় অভিযোগের কোন উত্তর দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন না। বরং সর্বপ্রকার আপত্তি ও জবাবদিহিতার দাবীকে অত্যন্ত ধৃষ্টতা বলে বিবেচনা করেন। এহেন ক্রোধ ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দিত।
আমাদের প্রত্যেকের এ কথা মনে রাখা কর্তব্য যে,আমাদের প্রত্যেকেরই দোষ-গুণ আছে, ভুল-বিচ্যুতি ও স্খলন আছে। সুতরাং নিজেকে সকল আপত্তি ও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে বিবেচনা করার কোন যুক্তি নেই। এ কথাটি মনে রাখলে আর প্রশ্নের সম্মুখীন হলে ক্লেশ বোধ হবে না। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ক্রোধ এবং ক্রোধের সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন,
আমীন।
[সংকলিত]
No comments:
Post a Comment