Sunday, July 5, 2015

কুফরি ও মুনাফেকি

কুফরি ও মুনাফেকি
গ্রন্থনা: শাইখ আব্দুল্লাহ ইব্ন ইবরাহীম আল কার‘আওয়ী
অনুবাদ: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
-------------------------------------------------------------
কুফরি দু’ প্রকার :
এক:
যা করলে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়।
নিম্নলিখিত পাঁচটি কারণে এ প্রকার কুফরি হয়ে থাকে:
১। মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে কুফরি : এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী: “আর তার চেয়ে কে বেশি অত্যাচারী যে আল্লাহর উপর মিথ্যার সম্বন্ধ আরোপ করেছে, অথবা তার কাছে হক (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া সঠিক কোন উপাস্য নেই এ কালেমা) আসার পর তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, জাহান্নাম কি কাফেরদেরই বাসস্থান নয়?” [সূরা আল আনকাবুত: ৬৮]
২। সত্য জেনেও অহংকার ও অস্বীকার করার কারণে কুফরি : এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী : “আর স্মরণ করুন যখন আপনার প্রভু আদমকে সিজদা করার জন্য ফেরেশ্‌তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন ইবলিস ব্যতীত সবাই সিজদা করেছিল, সে অস্বীকার করেছিল, এবং অহংকার বোধে গর্ব করেছিল আর কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।” [সূরা আল বাকারা: ৩৪]
৩। সন্দেহ করার দ্বারা কুফরি করা- আর তা হলো অসার ধারণার বশবর্তী হয়ে কুফরি করা : এর প্রমাণ কোরআনের বাণী : “আর সে তার বাগানে প্রবেশ করল এমতাবস্থায় যে সে তার আত্মার উপর অত্যাচার করছে, এ-কথা বলে যে, আমি মনে করি না যে, এটা (বাগান) কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে এবং কোনোদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে বলেও মনে করি না। আর যদি তা হয়েও যায় এবং আমাকে আমার প্রভুর কাছে ফিরে নেয়াও হয় তথাপি আমি তার কাছে ফিরে এর (বাগানের) চেয়ে আরও ভালো (বাগান) পেয়ে যাব। তার সাথী তাকে বলল: তুমি কি সেই স্বত্বার সাথে কুফরি করছ যিনি তোমাকে প্রথমে মাটি ও পরে বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং এরপর পূর্ণ মানুষরূপে তোমাকে অবয়ব দান করেছেন? কিন্তু আমি (বলছি) সেই আল্লাহই আমার রব ও পালনকর্তা, তার সাথে কাউকে শরিক করি না।” [সূরা আল-কাহফ: ৩৫-৩৮]
৪। এড়িয়ে যাওয়ার (বিমুখ হওয়ার) কারণে কুফরি : এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী : “আর যারা কুফরি করেছে তারা যে সমস্ত বস্তুর ভয় তাদেরকে দেখান হয়েছে সেগুলো থেকে বিমুখ হয়েছে (এড়িয়ে গেছে)।” [সূরা আল-আহকাফ: ৩]
৫। মুনাফেকি করার কারণে কুফরি : এর প্রমাণ আল্লাহর পবিত্র কালামে এসেছে : “এটা এ জন্য যে, তারা ঈমান এনেছে অতঃপর কুফরি করেছে; ফলে তাদের অন্তরের উপর সিল মেরে দেয়া হয়েছে সুতরাং তারা বুঝছে না, বুঝবেনা।” [সূরা আল মুনাফিকুন: ৩]
দুই : দ্বিতীয় প্রকার কুফরি
আর তা হলো ছোট কুফরি, যা করলে গুনাহ হলেও ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেনা, আর তা’ হলো আল্লাহর নেয়ামত এর সাথে কুফরি করা।
এর প্রমাণ : কোরআনের বাণী : “আল্লাহ্ তা‘আলা উদাহরণ দিচ্ছেন কোন নিরাপদ, শান্ত-স্থির জনপদের— যার জীবিকা চতুর্দিক থেকে অনায়াসে আসছিল, তখন তারা আল্লাহর নেয়ামতের সাথে কুফরি করলো, ফলে আল্লাহ তা‘আলা সে জনপদকে তাদের কার্যাদির শাস্তি স্বরূপ ক্ষুধা ও ভয়ে নিপতিত রাখল”। [সূরা আন্-নাহ্ল: ১১২]
মুনাফেকির প্রকারভেদ
মুনাফেকি দু প্রকার :
১। বিশ্বাসগত মুনাফেকি।
২। আমলগত (কার্যগত) মুনাফেকি।
এক : বিশ্বাসগত মুনাফেকি
এ-প্রকার মুনাফেকি ছয় প্রকার, এর যে কোন একটা কারো মধ্যে পাওয়া গেলে সে জাহান্নামের সর্বশেষ স্তরে নিক্ষিপ্ত হবে।
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
২। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার সামান্যতম অংশকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
৩। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ঘৃণা বা অপছন্দ করা।
৪। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার সামান্যতম অংশকে ঘৃণা বা অপছন্দ করা।
৫। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দীনের অবনতিতে খুশী হওয়া।
৬। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দীনের জয়ে অসন্তুষ্ট হওয়া।
দুই : কার্যগত মুনাফেকি
এ ধরণের মুনাফেকি পাঁচ ভাবে হয়ে থাকে: এর প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মুনাফিকের নিদর্শন হলো তিনটি:
১। কথা বললে মিথ্যা বলা।
২। ওয়াদা করলে ভঙ্গ করা।
৩। আমানত রাখলে খিয়ানত করা।[1]
অপর বর্ণনায় এসেছে :
৪। ঝগড়া করলে অকথ্য গালি দেয়া।
৫। চুক্তিতে উপনীত হলে তার বিপরীত কাজ করা।”[2]
________________________________________
[1] বুখারি (১/৮৩); মুসলিম (১/৭৮), হাদীস নং ৫৯।
[2] বুখারি (১/৮৪); মুসলিম (১/৭৮), হাদীস নং ৫৮।

No comments:

Post a Comment