Friday, July 10, 2015

রামাদানের শেষ দশকের আমল ও ইবাদত


রামাদানের শেষ দশকের আমল ও ইবাদত

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রামাদানের শেষ দশকে ইবাদত করতে যে মেহনত ও চেষ্টা করতেন, মাসের অন্যান্য দিনগুলিতে তা করতেন না।[(মুসলিম ১১৭৫নং)] মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রামাদানের শেষ দশক এসে উপস্থিত হলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) (ইবাদতের জন্য) নিজের কোমর (লুঙ্গি) বেঁধে নিতেন, সারারাত্রি জাগরণ করতেন এবং আপন পরিজনকেও জাগাতেন।’’[(বুখারী ২০২৪নং, আহমাদ, মুসনাদ ৬/৪১, আবূ দাঊদ ১৩৭৬, নাসাঈ ১৬৩৯, ইবনে মাজাহ ১৭৬৮, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ২২১৪নং)] অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি নিজে সারারাত্রি জাগরণ করতেন এবং আপন পরিজনকেও জাগাতেন। ইবাদতে মেহনত করতেন এবং কোমর (বা লুঙ্গি) বেঁধে নিতেন।[(মুসলিম ১১৭৪নং)]
(ক) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রামাদানের শেষ দশকে অতিরিক্ত কিছু এমন আমল করতেন, যা মাসের অন্যান্য দিনগুলিতে করতেন না। যেমন, তিনি রাত্রি জাগরণ করতেন। সম্ভবতঃ তিনি সারারাত্রি জাগতেন; অর্থাৎ পুরো রাতটাই নামায ইত্যাদিতে মশগুল থাকতেন।
অথবা তিনি পুরো রাতটাই কিয়াম করতেন। অবশ্য এরই মধ্যে তিনি রাতের খাবার ও সেহরী খেতেন। এ ক্ষেত্রে রাত্রি জাগরণের মানে হবে অধিকাংশ বা প্রায় সম্পূর্ণ রাতটাই জাগতেন। আর মা আয়েশার একটি কথা এই ব্যাখ্যার সমর্থন করে। তিনি বলেন, আমি জানি না যে, তিনি কোন রাত্রি ফজর পর্যন্ত কিয়াম করেছেন।[(মুসলিম ৭৪৬, নাসাঈ ১৬৪১নং)]
(খ) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এই রাতগুলিতে নামায পড়ার জন্য নিজের পরিবারের সকলকে জাগাতেন। আর এ কথা বিদিত যে, তিনি বছরের অন্যান্য মাসেও পরিবারকে নামাযের জন্য জাগাতেন। তাহাজ্জুদ পড়ার শেষে বিতর পড়ার আগে আয়েশা (রাঃ)কে জাগাতেন।[(বুখারী ৯৫২নং)] কোন কোন রাতে আলী ও ফাতেমার নিকট উপস্থিত হয়ে বলতেন, ‘‘তোমরা কি উঠে নামায পড়বে না?’’[(আহমাদ, মুসনাদ ১/১১২, বুখারী ১১২৭, মুসলিম ৭৭৫নং)] কিন্তু তিনি তাদেরকে রাত্রের কিছু অংশ নামায পড়ার জন্য জাগাতেন। বলা বাহুল্য, বছরের অন্যান্য রাতের তুলনায় শেষ দশকের রাতগুলিতে জাগানো ছিল ভিন্নতর।[ (দ্রঃ দুরুসু রামাযান অকাফাত লিস্-সায়েমীন ৮৬পৃঃ)]
(গ) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) শেষ দশকের রাতগুলিতে নিজের লুঙ্গি বেঁধে নিতেন। এ কথায় ইঙ্গিতে তাঁর ইবাদতের জন্য পূর্ণ প্রস্ত্ততি এবং চিরাচরিত অভ্যাসের তুলনায় অতিরিক্ত প্রচেষ্টাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, তিনি কোমরে কাপড় বেঁধে ইবাদতে লেগে যেতেন।
অথবা তাতে ইঙ্গিতে স্ত্রী-সংস্পর্শ ও সহবাস ত্যাগ করার কথা বুঝানো হয়েছে। আর এই বুঝটাই সঠিকতর বলে মনে হয়। কারণ, যিনি ইবাদতের জন্য রাত জাগবেন এবং স্ত্রীকে জাগাবেন, তাঁর আবার ঐ দিকে মন যাবে কেন? তাছাড়া মুসনাদে আহমাদের এক বর্ণনায় আলী (রাঃ)-এর হাদীসে আরো একটু স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘‘তিনি লুঙ্গি তুলে নিতেন।’’ এই হাদীসের এক বর্ণনাকারী আবূ বাক্রকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘‘তিনি লুঙ্গি তুলে নিতেন।’’ এ কথার অর্থ কি? উত্তরে তিনি বললেন, অর্থাৎ তিনি স্ত্রীগণ থেকে পৃথক হয়ে যেতেন।[(আহমাদ, মুসনাদ ১/১৩২, ১১০৩নং, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৯৫৪৪নং)] পক্ষান্তরে মা আয়েশা (রাঃ)এর এক বর্ণনায় অতি স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে, ‘‘তিনি লুঙ্গি বেঁধে নিতেন এবং স্ত্রীগণ থেকে পৃথক হয়ে যেতেন।’’[(আহমাদ, মুসনাদ ৬/৬৭, ২৪২৫৮নং)]
মহান আল্লাহ বলেন, {فَالآنَ بَاشِرُوْهُنَّ وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللهُ لَكُمْ}
অর্থাৎ, এক্ষণে (রামাদানের রাতে) তোমরা স্ত্রী-গমন কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বিধিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান কর।
(কুরআনুল কারীম ২/১৮৭)
সালাফদের একটি জামাআত উক্ত আয়াতের তফসীরে বলেন যে, এখানে উদ্দেশ্য হল শবেকদর অনুসন্ধান করা। সুতরাং তার মানে হল, মহান আল্লাহ যখন রামাদানের রাতে ফজরের আগে পর্যন্ত স্ত্রী-গমন হালাল করলেন, তখনই সেই সাথে শবেকদর অনুসন্ধান করতে আদেশ করেছেন। যাতে মুসলিমরা এ মাসের পুরো রাতটাই হালাল স্ত্রী-কেলিতে কাটিয়ে না দেয় এবং তার ফলে শবেকদর থেকে তারা বঞ্চিত না হয়ে যায়। তাই বৈধ যৌনাচারের সাথে সাথে তাহাজ্জুদ পড়ে শবেকদর অনুসন্ধান করতেও আদেশ করলেন রোযাদারকে; বিশেষ করে সেই সকল রাত্রে, যেগুলিতে লাইলাতুল কদর হওয়ার আশা থাকে। এই জন্যই মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রামাদানের ২০ তারীখের রাত পর্যন্ত স্ত্রী-সংসর্গে থাকতেন। কিন্তু তারপর ২১শের রাত থেকেই তিনি তাঁদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে যেতেন এবং লাইলাতুল কদর পাওয়ার কামনায় শেষ রাতগুলিতে পুরো রাতটাই একমন হয়ে ইবাদত করতেন।
অতএব আমাদের উচিৎ হল, সকল প্রকার কল্যাণে তাঁরই অনুসরণ করা।
মহান আল্লাহ বলেন,
{لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ}

অর্থাৎ, নিশ্চয় রসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। (কুরআনুল কারীম ৩৩/২১)

No comments:

Post a Comment