মীলাদ মাহফিল কি ?
পাক ভারত ও বাংলার মুসলিম
সমাজে প্রচলিত ও
সবচেয়ে আকর্ষণীয়
এবং ব্যাপকভাবে পালনীয়
অনুষ্ঠানটি হচ্ছে মীলাদ মাহফিল। আরবী “মীলাদ”
শব্দের অর্থ জন্মের সময়
(আল-কামূস, ১ম খন্ড, পৃ-২১৫,
নওলকিশোর ছাপা, মিসবা-
হুল লূগা-ত ৯৫৪৭ পৃঃ, ৫ম খন্ড
সংস্করণ, দিল্লী ছাপা)। কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের
সূচনায় মীলাদ যেন
অপরিহার্য এবং এটা পালন
করা যেন বিরাট সোয়াবের
কাজ। অথচ এই মীলাদ এর
কথা পবিত্র কোরআন শরীফ ও রাসুল (সাঃ) এর হাদীস এ
তন্ন তন্ন করে খুজলেও
পাওয়া যাবে না।
অথবা মীলাদ ইসলামের
স্বর্ণযুগে কোন সাহাবী,
তাবিঈ, তাবি-তাবিঈ বা কোন ইমাম করেছেন
বা করতে বলেছেন তার কোন
দলীল প্রমাণও নেই। কোন
নির্ভরযোগ্য আলেমও
ইহা করেননি। আসলে মীলাদ
চালু হয়েছে রাজা বাদশাহ বা স্বল্প শিক্ষিত সূফীদের
দ্বারা তাই
সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত
নবীর প্রেমের নামে এই
মীলাদ মাহফিল ইসলামের
কোন অংশ নয়, বরং ইহা ধর্মের নামে নতুন
আবিষ্কৃত বিদআত।
মীলাদ এর ইতিহাস
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময়,
খুলাফায়ে রাশেদীনের সময়
বা ইসলামের স্বর্ণযুগে মীলাদ ছিল না।
এর বীজ বপন করে আব্বাসীয়
খলিফাদের যুগে জনৈক
মহিলা। (ইবনু জুবায়ের ১১৪,
৬৩ পৃঃ ও আল-বতালুনী ৩৪ পৃঃ)
অতঃপর হিজরীয় চতুর্থ শতকে উবাইদ নামে এক
ইয়াহুদী ইসলাম গ্রহন করে।
তার নাম রাখা হয়
উবাইদুল্লাহ।
তিনি নিজেকে ফাতিমা (
রাঃ) এর সম্ভ্রান্ত বংশধর বালে দাবী করেন
এবং মাহদী উপাধী ধারন
করেন। এরই প্রপৌত্র মুয়িয
লিদীনিল্লাহ ইয়াহুদী ও
খৃষ্টানদের জন্মবার্ষিকীর
অনুকরণে ছয় রকম জন্মবার্ষিকী ইসলামে
আমদানী করেন।
এবং মিশরের
ফাতেমী শিয়া খেলাফতের
প্রতিষ্ঠাতা আবু মুহাম্মদ
উবাইদুল্লাহ ইবনু মায়মুন প্রথমে ইয়াহুদী ছিলেন (আল
বিদায়াহ
আননিহাইয়া একাদশ ১৭২
পৃঃ)।
কারো মতে তিনি ছিলেন
অগ্নিপূজারী (মাকরিজীর আল খুতাত আল আ-সার ১ম খন্ড,
৪৮পৃঃ)। মুসলিমদের
মাঝে এই
জন্মবার্ষিকী রীতি চালু
হওয়ার ১০৩ বছর পর অর্থাৎ
৪৬৫ হিজরীতে আফজাল ইবনু আমীরুল জাইশ মিশরের
ক্ষমতা দখল করে রাসুল
(সাঃ), আলী (রাঃ),
ফাতিমা (রাঃ), হাসান
(রাঃ), হোসেন (রাঃ) এর
নামে সহ নতুন প্রচলিত ছয়টি জন্মবার্ষিকী পালনের
রীতি বাতিল করে দেন –
(মিশরের মুফতী শায়খ
মুহাম্মদ রচিত আহসানউল
কালা-ম
ফী মাইয়্যাতা আল্লাকু বিস সুন্নাতি অল বিদআতী মিনাল
আহকাম, ৪৪ – ৪৫ পৃঃ
বরাতে তাম্মিহু উলিল
আবসা-
রা ইলা কামা লিদ্দিন
আমা ফিল বিদআয়ী মিনাল আখতার, ২৩০ পৃঃ)। এরপর ৩০
বছর বন্ধ থাকার পর
ফাতেমী শিয়া খলিফা আমির
বি-আহকা মিল্লা-হ পুনরায়
এই প্রথা চালু করেন। তখন
থেকেই মীলাদের এই রীতি চালু হয়ে এখনও চলছে।
আরও জানা যায় যে, এই
মীলাদ
প্রথা খলিফা মুস্তালি
বিল্লাহর
প্রধান্মন্ত্রী বদর আল জামালী বাতিল করে দেয়।
এবং তার মৃত্যুর পর পুনরায়
চালু হলে পরবর্তীতে কোরআন
– হাদীসের অনুসারী সুলতান
সালাহুদ্দিন আইয়ুবী এই
মীলাদ প্রথা বাতিল করে দেন এবং পরে তা আবার
চালু হয় (মাকরিজীর আল
খুতাত ১ম খন্ড, ৪৯০ পৃঃ ;
তাম্মিহু উলিল আবসা-র ৩২
পৃঃ)।
পরে সুন্নীদের মাঝেও মীলাদ ঢুকে পড়ে। আনুমানিক
৬০৪ হিজরীতে সুন্নীদের
মাঝে মীলাদের সুত্রপাত
হয়। অতঃপর ইরবিলের
শাসনকর্তা মুজাফফরউদ্দিন
তা ধুমধামের সাথে মানাতে থাকে।
(আফাইয়া-তুল আ’য়া-ন ৩য়
খন্ড, ১২২ পৃঃ)। আর ভারতীয়
উপমহাদেশে মীলাদ
আমদানীকারীরা ছিল
শিয়া। ভারতের মোঘল সম্রাটদের কিছু মন্ত্রী ও
পরামর্শদাতা ছিল শিয়া,
যেমন মোঘল সম্রাট হুমায়ুন ও
সম্রাট আকবরের
মা শিয়া ছিল এবং আকবরের
অভিভাবক বৈরাম খাঁ কট্টর শিয়া ছিলেন। বাদশাহ
বাহাদুর শাহ্ শিয়া ছিলেন।
তারাই এই
উপমহাদেশে সুন্নীদের
মধ্যে মীলাদ এর প্রচলন
করে দেন। ফলে শিয়াদের এই প্রথাগুলো সুন্নীদের
মাঝে প্রচলিত হয়ে পড়ে –
(শায়খ আইনুল
বারী আলিয়াবীর কতৃক রচিত
“মীলাদ্দুন্নবী ও বিভিন্ন
বার্ষিকী” পুস্তকের ৩৩ পৃঃ)। অন্য বর্ণনা থেকে জানা যায়
যে, মীলাদ পাথের নিয়ম
৫৯০ হিজরীতে ফরাহ ইবনু
নসরের যুগে প্রচলিত হয়।
তিনি খুব আরামপ্রিয় সুলতান
ছিলেন। শরীয়াতের কড়াকড়ি নির্দেশ
তিনি মেনে চলতেন না।
সামান্য
কাজে কিভাবে বেশী সওয়াব
পাওয়া যায় তিনি এরুপ
কাজের অনুসন্ধান করতেন। অবশেষে শাফিঈ মাযহাবের
এক বিদআতী পীর প্রচলিত
মীলাদ পাঠের
পদ্ধতি আবিস্কার
করে সুলতানকে উপহার দেয়
এবং সুলতান বড় সওয়াবের কাজ মনে করে রাষ্ট্রীয়
পর্যায়ে ধর্ম পলনের
নামে মীলাদ পাঠের
ব্যবস্থা চালু করেন। সেখান
থেকেই প্রচলিত মীলাদের
উদ্ভব ঘটে- (হাফিজ আইয়ুব বিন ইদু মিয়া রচিত “মীলাদ
কেন বিদাআত” এর ১৮ পৃঃ)।
এই মীলাদের ইতিহাস
থেকে জানা যাচ্ছে যে এগুলো
কোরআন ও হাদীস সমর্থিত নয়
বরং ইয়াহুদী , খৃষ্টান ও আগ্নিপূজকদের রীতি আনুকরন
ও আনুসরন। আর অন্য জাতির
সাদৃশ্য সম্পর্কে রাসুল (সাঃ)
বলেন, যে ব্যাক্তি কোন
সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহন
করে সে তার দলভুক্ত হয়ে থাকে। - (আবু দাউদ, ২য়
খন্ড, ২৩০পৃঃ ; মুসনাদে আহমদ
২য় খন্ড, ৫০ ও ৯২ পৃঃ ;
মিশকাত ৩৭৫ পৃঃ)। রাসুল
(সাঃ) আরও বলেন যে,
সে আমাদের দলের নয় যে ব্যাক্তি আমাদের
ছাড়া অন্যের সাদৃশ্য গ্রহন
করে। তোমরা ইয়াহুদী ও
খৃষ্টানদের সাদৃশ্য গ্রহন কর
না – (তিরমিযী ২য় খন্ড, ৫৪
পৃঃ ; মিশকাত ৩৯৯ পৃঃ) সমাজে মীলাদের গুরুত্ব
মীলাদ সমাজে এতই গুরুত্ব
লাভ করেছে যে, অধিকাংশ
মানুষ মনে করে কোন
গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরুর
পূর্বে সাফল্য ও বরকতের আশায় অবশ্যই মীলাদ
পরাতে হবে। তাই
তো দেখা যায় যে, সাধারন
মানুষ থেকে শুরু
করে রাষ্ট্রপ্রধানদের
পর্যন্ত তাদের জন্ম মৃত্যু দিবসে, বিয়েতে,
শবে বরাতে, জুমআহ নামাযের
পর, বাড়ী বা দোকান
উদ্বোধনে কোন কিছুর আশায়
বা আশংকায় মীলাদের
ব্যবস্থা করে। আবার কেউ মীলাদের মানতও করে।
এমনকি সুদী ব্যাংক ও ক্লাব
উদ্বোধনে, রাষ্ট্রীয় ও
সামাজিক অনুষ্ঠানে দলীয়
দিবস সহ প্রভৃতিতে খুবই শান
শওকাতে এবং ব্যাপক প্রচার ও শরীক হবার আহবান
করে মীলাদ পড়া হচ্ছে। আর
অন্য দিকে পয়সা কামানোর
ধান্দায় কিছু ভুয়া ও
নামধারী আলেম ও
মোল্লারা এসব টিকিয়ে রেখে অর্থ
বা টাকা কামাইয়ের পথ চালু
রাখতে তথাকথিত নবীর
মহব্বতের নামে মীলাদ
পড়াচ্ছে এবং এর মিথ্যা গুন-
কীর্তন করে সাধারন মানুষকে বিদআত
কাজে উৎসাহিত করে পাপের
কাজে ডুবিয়ে রেখেছে এবং
তাদের কাছে মীলাদ
সম্পর্কে জানতে চাইলে
দলীল প্রমাণ ও সনদ ছাড়াই মীলাদ সম্পর্কিত নিজেদের
মনগড়া, ভিত্তিহীন,
বানোয়াট,
ইত্যাদি মিথ্যা কথা বলে
থাকে। অথচ কোরআন ও সহীহ
হাদীস থেকে পাওয়া যায় যে,
** হে মুহাম্মদ
আপনি বলুনঃ যদি তোমরা
সত্যবাদী হও তবে প্রমাণ
নিয়ে এস। ( সূরা বাকারা,
আয়াত নং- ১১১ এবং সূরা নামল, আয়াত নং-
৬৪ )
** হে মুহাম্মদ আপনি তাদের
(মানুষের)
মধ্যে ফয়সালা করুন আল্লাহ্
যা নাযিল করেছেন তদানুসারে এবং আপনার
কাছে যে সত্য
এসেছে তা ছেরে তাদের
খেয়াল খুশির অনুসরন করবেন
না আর তাদের সমন্ধে সতর্ক
থাকবেন যাতে তারা আপনাকে বিচ্যুত
না করতে পারে আপনার
প্রতি যা নাযিল
করা হয়েছে তার কোন কিছু
থেকে...... আর মানুষের
মধ্যে তো অধিকাংশই অর্থাৎ বেশীর ভাগই নাফরমান।
( সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং-
৪৮ ও ৪৯)
** হে মুহাম্মদ
আপনি বলুনঃ আছে কি
তোমাদের কাছে কোন প্রমাণ?
যদি থাকে তবে তা আমার
কাছে পেশ কর।
তোমরা তো শুধু অনুমানের
পেছনেই চলছ এবং কেবল
আন্দাজ করে কথা বলছ। (সূরা আন”আম, আয়াত নং- ১৪৮)
** তবে কি তোমরা আমার
সঙ্গে এমন বিষয়ে বিতর্ক
করছ যা তোমরা ও তোমাদের
বাপ-দাদারা নির্দিষ্ট
করে নিয়েছ? অথচ আল্লাহ্ এদের সমন্ধে কোন প্রমাণ
নাযিল করেননি। আল্লাহ্
ছাড়া কারও বিধান দেয়ার
অধিকার নেই... কিন্তু
অধিকাংশ মানুষ
তা জানে না। ( সূরা ইউনুস, আয়াত নং- ৪০ ও সূরা আ’রাফ,
আয়াত নং- ৭১ )
** হে মুহাম্মদ
আপনি বলুনঃ তোমরা
তোমাদের সপক্ষে প্রমাণ
উপস্থিত কর। ..... কিন্তু তাদের অধিকাংশ মানুষই
সত্য জানে না, তাই তারা মুখ
ফিরিয়ে নেয়।
( সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-
২৪ )
** কিছু মানুষ এমনও আছে যারা আল্লাহ্
সমন্ধে কোন জ্ঞান ছাড়া,
কোন প্রমাণ ছাড়া ও কোন
উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই
কথা বলে। ......
তাকে আস্বাদন করাব দোযখের দহন যন্ত্রনা।
( সূরা আল হাজ্জ, আয়াত নং- ৮
ও ৯ এবং সূরা লুকমান, আয়াত
নং- ২০ )
** ধ্বংস হোক ভিত্তিহীন
উক্তিকারীরা ( সূরা যারিয়াত , আয়াত নং – ১০ )
** নবী (সাঃ) বলেছেন,
দলীল প্রমাণ ব্যতীত
কাউকে ফতোয়া দেয়া হলে
তার পাপের ভার
ফতোয়া দাতার উপর বর্তাবে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ,
অধ্যায়- ১, অনুচ্ছেদ-৮,
হাদীস নং- ৫৩ , পৃঃ- ৫৩,
প্রকাঃমিনা)
** রাসুল (সাঃ) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের সকল
কাজকর্ম ততখন পর্যন্ত সঠিক
ছিল যতখন না তাদের
মাঝে দাসীর গর্ভে সন্তান
হয়। অতঃপর
তারা মনগড়া ফতোয়া দিতে শুরু করে ফলে তারা নিজেরা
পথভ্রষ্ট হয় এবং অপরকেও
পথভ্রষ্ট করে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ,
অধ্যায়- ১, অনুচ্ছেদ-৮,
হাদীস নং- ৫৬ , পৃঃ- ৫৩, প্রকাঃমিনা)
** রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
কোন মিথ্যাবাদী হওয়ার
জন্য এটাই যথেষ্ট যে,
সে যা শুনবে তার
সত্যতা যাচাই বাছাই না করে তাই বর্ণনা করবে।
[প্রমান দেখুনঃ- সহীহ
মুসলিম শরীফ
(মুকাদ্দামাহ) , অনুচ্ছেদ –
০৩ ,
অধ্যায়ঃ যা শুনে তা বর্ণনা করা নিষিদ্ধ ,
প্রকাঃ বাংলাদেশ
ইসলামিক সেন্টার
পৃষ্ঠা নং ৪০ – ৪১ ,
আ.হা.লা পৃষ্ঠা নং ০৯ – ১১ ;
মিশকাত শরীফ , হাদীস নং – ১৫৬ , সনদঃ সহীহ হাদীস ]
** ইমাম আবু হানীফা (র)
বলেন, আমার কোন কথা গ্রহন
করা কারো জন্য বৈধ
হবে না যে পর্যন্ত
না সে জানে আমি কোন সুত্রে তা বলেছি বা কোথা
থেকে গ্রহন করেছি তা অবগত
না হবে অর্থাৎ যে পর্যন্ত
প্রমাণ না মিলবে।
(মুকাদ্দামাতুল হেদায়া, ১ম
খন্ড, পৃঃ৯৩ ; বাহরুর রায়েক, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ২৯৩ ; হাশিয়াহ
ইবনু আবেদীন ৬/২৯৩) ; ইমাম
আবু হানীফা (র) আরও বলেন
যে, সেই ব্যক্তির জন্য আমার
কথা দ্বারা ফতোয়া দেয়া
হারাম যে আমার দলীল প্রমাণ সম্পর্কে অবগত
হতে পারেনি।
মীলাদ মাহফিল পালন কেন
বিদআত বা হারাম ?
পৃথিবীর ইতিহাস
থেকে আমরা জানতে পাই যে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর
সময়, খুলাফায়ে রাশেদীনের
সময় বা ইসলামের
স্বর্ণযুগে মীলাদ ছিল না ।
মীলাদের প্রচলন
অমুসলিমদের থেকে শিয়াদের
মধ্যে প্রবেশ করে। আর এ
সম্পর্কে আল্লাহ্
তায়ালা কোরআনে বলেছেন,
** মুসলিমদের মধ্য
হতে যারা খৃষ্টান ইয়াহুদীদের পথ অনুসরন
করে তারা ঐ কাফিরদের
অন্তর্ভুক্ত।
( সূরা মায়িদাহঃ ৫১)
** আজ আমি তোমেদের জন্য
ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের
প্রতি আমার নেয়ামত
পরিপূর্ণ করে দিলাম
এবং ইসলামকে তোমাদের
জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ
করলাম। ( সূরা মায়িদাহঃ ৩)
এর থেকে বুঝা যায় যে,
আল্লাহ্ আমাদের জন্য
ইসলামকে পরিপূর্ণ
করে দিয়েছেন
সুতরাং ইসলামের মধ্যে নতুন কিছু যোগ বা বিয়োগ
করা যাবে না, কেউ
করলে সে ইসলাম
থেকে বহিস্কার
হয়ে যাবে এবং কাফির
হয়ে যাবে। সহীহ হাদীস
থেকে পাওয়া যায় যে,
** রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
যারা অমুসলিম জাতির
অনুসরন করে তারা ওদের
দলভুক্ত। (আবূ দাউদ) ** রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
ভবিষ্যতে তোমরা যারা
জীবিত থাকবে, তারা বহু
বিভেদ – মতবাদ দেখবে।
তোমরা ইসলামে নতুন নতুন
বিষয়ে লিপ্ত হওয়া থেকে দূরে থাকবে
কারন তা গোমরাহী।
তোমাদের কেউ সে যুগ
পেলে সে যেন আমার
সুন্নাতে ও হেদায়াত প্রাপ্ত
খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতে দৃঢ়ভাবে অবিচল
থাকে। তোমরা এসন
সুন্নাতকে চোয়ালের দাতের
সাহায্যে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে
ধর। (বিদায়ী হজ্জের
ভাষণ ; তিরমিযী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, হাদীস নং - ২৬১৩,
পৃঃ ৭৬৫ ; আদ দারেমী –
পৃঃ ৮১, প্রকাঃমিনা ; একই
প্রসঙ্গে- মুসনাদে আহমাদ,
খন্ড-১, অধ্যায়- ৫,
পরিচ্ছেদ- ২, হাদীস নং- ৭, পৃঃ- ১৫৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন , আবূ দাউদ,
ইবনে মাজাহ,
ইবনে হিব্বান,
সুনানে হাকিম)
** আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত - রাসুল (সাঃ)
বলেছেন, আমাদের এই
দ্বীনের মাঝে যদি কেউ নতুন
কিছু উদ্ভাবন বা আবিষ্কার
করে তা পরিত্যজ্য অর্থাৎ
বাতিল। (সুনানে ইবনে মাজাহ,
অধ্যায়- ১, হাদীস নং- ১৪,
পৃঃ- ৪৫ ; মেশকাত শরীফ, ১ম
খন্ড, হাদীস- ১৩৩, পৃঃ- ৪৬
প্রকাঃমিনা)
** রাসুল (সাঃ) বলেছেন, দ্বীনের মাঝে নতুন কিছু
আবিষ্কার করা অর্থাৎ
বিদআত সবচেয়ে মন্দকাজ
এবং প্রত্যেক বিদআতই
গোমরাহী।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়- ১, অনুচ্ছেদ-৭,
হাদীস নং- ৪৫ ও ৪৬ , পৃঃ-
৫১ ; মেশকাত শরীফ, ১ম খন্ড,
হাদীস- ১৩৪, পৃঃ- ৪৬
প্রকাঃমিনা)
সাহাবায়ি কিরাম ধর্মের নামে নবআবিষ্কার ও
অতিভক্তি থেকে সবসময়
সতর্ক থাকতেন এবং এ ধরনের
কোন কিছুর আলামত
দেখলে সাথে সাথেই নির্মূল
করে দিতেন যার কয়েকটি দৃষ্টান্ত
তুলে ধরা হলঃ
একদিন আমীরুল মু’মিনীন
ওমার (রাঃ) মক্কাহ
অভিমুখে গমনকালে পথিমধ্যে
দেখতে পেলেন কিছু লোক রাস্তা ছেরে অন্নদিকে
যাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস
করলেন, এই মানুষগুলো কোথায়
চলেছে? লোকেরা বলল,
নবী (সাঃ) একবার এই
স্থানে সলাত আদায় করেছিলেন, সেখানে সলাত
পড়ার জন্য তারা যাচ্ছে।
তিনি বললেন, এই কারনেই
তো পূর্বের জাতিগুলো ধ্বংস
হয়েছে যে, তারা নবীদের
স্মরণ চিহ্নগুলোকেও তাবাররুক মনে করে ঐগুলিকে
তীর্থস্থানে পরিণত
করে নিয়েছিল। সাবধান,
তোমরা সে মত করো না।
সেখানে যদি সলাতের সময়
হয় তাহলে সেখানে সলাত আদায় করো, অন্যথায়
যেখানেই সলাতের সময়
হবে সেখানেই আদায় করবে।
(অধ্যক্ষ
মাওলানা হাবীবুল্লাহ খান
রহমানী অনুবাদকৃত মীলাদুন্নবী ১০ ও ১১ পৃঃ)
একদিন যখন আমীরুল মু’মিনীন
ওমার (রাঃ)
জানতে পারলেন, যে গাছের
নিচে নবী (সাঃ) নিকট
হতে স্বেচ্ছায় শপথ অর্থাৎ বাইয়াত গ্রহন করেছিলেন, ঐ
গাছটিকে বরকতময় ও
মঙ্গলময়
বলে অনুমতি হতে চলেছে,
তখন তিনি উক্ত গাছ
কাটতে বললেন। (ঐ) একদিন আব্দুল্লাহ ইবনু
মাসউদ দেখলেন, জনগন
মসজিদে গোল
আকারে বসেছে যিকররের
জন্য, তখন তিনি অত্যন্ত
রাগান্বিত হয়ে বললেন, তোমরা এখন হতেই
বিদআ’তী হয়ে গেলে তারপর
তিনি তাদেরকে মসজিদ
থেকে বের করে দিলেন। (ঐ)
সাহাবীগন এই প্রকার
সামান্য ক্রুটি বিচ্যুতিও ছেড়ে দিতেন না,
বরং তা হতে বাধা দান
করতেন এবং সেটার
মূলোচ্ছেদ করে ফেলতেন।
তাই সহজেই অনুধাবন
করা যায় যে, সাহাবীগন যদি আজ পর্যন্ত জীবিত
থাকতেন এবং শরীয়াত
বিরোধী বিদআত ও অবৈধ
সভা বা মীলাদ মাহফিল
হতে দেখতেন,
তাহলে তারা কিরুপ শাস্তি বিধান করতেন?
সত্যিই তা ভাববার বিষয়।
মীলাদে কিয়ামের
নামে যা করে হচ্ছে
কিয়াম আরবী শব্দ যার অর্থ
দাঁড়ানো। সমাজের প্রচলিত মীলাদে দেখা যায় যে এক
পর্যায়ে সকলেই কিয়াম
করে অর্থাৎ দাঁড়িয়ে যায়
এবং দুরুদের
নামে বিদাআতী শব্দগুলো
বলতে থাকে, যথা- ইয়া নবী সালামু আলাইকা,
ইয়া রাসুল...... ইত্যাদি।
কিন্তু একবারও
কি চিন্তা করে দেখাঁ হয়্য
যে, কি বলা হচ্ছে। যেমন –
আরবীতে ইয়া শব্দ দ্বারা কারো উপস্থিতি বা
বর্তমানকালে হাজির
বুঝায়। যারা কিয়াম
করে তাদের যুক্তি হলো,
মিলাদে রাসুল (সাঃ) এর রুহ
হাজির হয় তাই তারা রাসূল (সাঃ) এর সম্মানে বা তার
রুহের দাঁড়ান।
তুহফাতুল কূযাত
পুস্তকে লিখা আছে –
জনসাধারণ মিলাদ এর সময়
দাঁড়ায়। তাদের বিশ্বাস, নবী (সাঃ) রুহ আগমন
করে এবং তা হাজির হয়।
কিন্তু তাদের ধারণা বাতিল
ও মিথ্যা। অথচ এমন
কথা বিশ্বাস শিরক এর
পর্যায়ভুক্ত। আর চার ইমামও এ বিষয়ে নিষেধ করেছেন।
আর আমাদের এটাও
জানা দরকার যে, মীলাদ ও
দুরুদ এক জিনিস নয়। কিন্তু
কল্পিত মনগড়া ও নয়ুন
আবিষ্কৃত বানানো দুরুদ পাঠ করলে চলবে না,
যে ভাবে এবং যে শব্দে রাসুল
(সাঃ) সাহাবীগণকে দুরুদ
শরীফ পাঠ
করতে শিখিয়েছেন, ঠিক
সেইভাবে ও সেই শব্দসমূহ দ্বারাই রাসুল (সাঃ)
প্রতি দুরুদ পাঠ করতে হবে।
এ সম্পর্কে সাহাবীগণ
নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞেস
করেছিলেন, হে আল্লাহ্র
রাসুল! আপনার ও আপনার পরিবারবর্গের প্রতি দুরুদ
পাঠের পদ্ধতি কি?
জবাবে নবী (সাঃ) যে দুরুদ
পড়ে শুনালেন তা আমাদের
কাছে দুরুদে ইব্রাহীম
নামে পরিচিত এবং বললেন এভাবে পাঠ করলেই আমার
প্রতি দুরুদ পাঠ করা হবে।
( বোখারী, মুসলিম, মিশকাত
হাদীস- ৮৫৮ , ৫৮৯)। তাই
আমাদেরকে রাসুল (সাঃ) এর
শিখানো যা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে সে সব দুরুদই পাঠ
করতে হবে, অন্য কোন
পদ্ধতি বা নতুন
বানানো দুরুদে নয়। মীলাদ
অনুষ্ঠানে কিয়াম
দ্বারা যে দুরুদ পড়া হয় তা বিদআত।
বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ
অনুষ্ঠানে “ইয়া নবী সালামু
আলাইকা, ইয়া রাসুল.........”
বলে সমবেত কণ্ঠে সুর
করে যেভাবে দুরুদের নামে এই সব বাক্য পাঠ
করা হয়, এরুপ পাঠের নিয়ম
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময়,
সাহাবীদের যুগে,
খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে,
তাবিঈ, তাবি-তাবিঈ, ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের
যুগে বা ইসলামের
স্বর্ণযুগে ছিল না। তাই এরুপ
অনুষ্ঠান এবং ঐরুপে বাক্য
সুরেলা উচ্চারনে সওয়াবের
উদ্দেশে পালন করা হলে তা বিদআত হবে,
তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই প্রচলিত এসব মনগড়া,
বানানো ও তথাকথিত দুরুদ
সম্পর্কে দক্ষিন এশিয়ার
অন্যতম নির্ভরযোগ্য ও
বিখ্যাত রিজাল শাস্ত্রবিদ
আবু মুহাম্মদ আলীমুদ্দীন নাদীয়াভী সাহেব
বলেনঃ দালায়েল খাযরাত,
দুরুদ তাজ, দুরুদে হাজারী,
দুরুদে লাখী, দু’আয়ে গঞ্জল
আরশ, মিরাজনামা, নূরনামা,
দুরুদে মাহী, দুরুদে নারিয়া প্রভৃতি নামে
বিভিন্ন বই
বাজারে পাওয়া যায়
এবং কেউ কেউ তা আমলও
করে থাকে অথচ এগুলি কোরআন
বা হাদীসে নেই অর্থাৎ ইসলামে নেই। হাদীস ও
রিজাল শাস্ত্রে অনভিজ্ঞ
লোকদের দ্বারা এসব দুরুদ
মানুষের
দ্বারা বানানো এবং বই
আকারে মুদ্রিত। ইসলামের শরীয়ায় যে সমস্ত দুআ
শিক্ষা দেয়া হয়েছে তা
উম্মতের ইচ্ছাধীন নয়।
শরিয়ত শিক্ষার উপর
নির্ভরকৃত, যার কোন বিকল্প
নেই, এমনকি যে শব্দ যেভাবে শিক্ষা দেয়া
হয়েছে ঐ শব্দের প্রতিশব্দও
ব্যাবহার করা যাবে না।
এটাই হাদীস
দ্বারা সাব্যস্ত
এবং ইসলামের আলেমগনের সিদ্ধান্ত। অতএব যে সমস্ত
দুরুদ রাসুল (সাঃ) কতৃক
সাহাবাগন দ্বারা বর্ণিত
নয় তা বিদআ’তী দুরুদ
বলে গণ্য এবং তার উপর আমল
করা চলবে না। (রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সলাত
এবং আকীদাহ ও
জরুরী মাসআলা নামক
বইয়ে ২৩৯ পৃঃ)
কিয়াম সম্পর্কে হাদীস
এবং পৃথিবীর বড় বড় আলেমদের মন্তব্য
ü আবু উমামাহ (রাঃ) বলেন,
একদিন রাসুল (সাঃ)
লাঠি ভর দিয়ে আমাদের
নিকট উপস্থিত হলেন। আর
আমরা তার সম্মানার্থে সকলে উঠে
দাঁড়ালাম। তখন রাসুল (সাঃ)
বললেন যে অনারবরা যেমন
একে অপরের
সম্মানার্থে দাঁড়ায়
তোমরা সেই মত আমার জন্য দাঁড়াবে না। (মিশকাত)
ü আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ
(রাঃ) বলেন,
আমরা সাহাবায়ি কিরাম
রাসুল (সাঃ) এর মৃত্যুর
আগে আসসালামু আলাইকা বলতাম কিন্তু তার
মৃত্যুর পর আসসালামু
আলাননাবী বলে থাকি।
(বোখারী শরীফ)
ü হানাফী মাযহাবের
নির্ভরযোগ্য কিতাব “ বাযযাযিয়া “ তে উল্লেখ
হয়েছে –
যে ব্যাক্তি বলে যে, বুজুর্গ ও
মহৎ ব্যাক্তিগনের রুহ মৃত্যুর
পর দুনিয়ায় আগমন করে,
জেনে রাখ ঐ ব্যাক্তি কাফির।
ü তুহফাতুল কূযাত
পুস্তকে লিখা আছে –
জনসাধারণ মিলাদ এর সময়
দাঁড়ায়। তাদের বিশ্বাস,
নবী (সাঃ) রুহ আগমন করে এবং তা হাজির হয়।
কিন্তু তাদের ধারণা বাতিল
ও মিথ্যা। অথচ এমন
কথা বিশ্বাস শিরক এর
পর্যায়ভুক্ত। আর চার ইমামও
এ বিষয়ে নিষেধ করেছেন। ü বিখ্যাত হানাফী আলেম
মাওলানা রশীদ আহমদ
গাঙ্গোহী তার
ফাতাওয়ায়ে রাশেদীয়ায়
বলেছেনঃ মিলাদ মাহফিল
নাজায়েয, মিলাদে যোগদান করা গুনাহর কাজ। আর রাসুল
(সাঃ) কে হাজির
মনে করে করলে করলে সেটা
হবে কফুরী।
(ফাতাওয়ায়ে রাশেদীয়া
৪১৫ পৃঃ ) ü হানাফী মাযহাবের
বিখ্যাত ফকীহ মুহাম্মাদ
শামী তার
সীরাতে শামী গ্রন্থে
লিখেছেন – মিলাদের এক
পর্যায়ে সবাই দাড়িয়ে যায়। এই মীলাদ
এবং এর কিয়াম উভয়ই
বিদআত। এর কোন দলীল নাই।
সমাজের প্রচলিত মিলাদ
মাহফিলে মানুষজন একসময়
ইয়া নবী সালামু আলাইকা... বলে দাড়িয়ে যায় ও কিয়াম
করে। অথচ সহীহ হাদীস
থেকে পাওয়া যায় যেঃ-
(১) আনাস (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ পৃথিবীতে
দেখতে প্রিয় (অর্থাৎ চক্ষুকে আনন্দ দানকারী)
কোন ব্যাক্তি রাসুল (সাঃ)
এর অপেক্ষা আর কেউ ছিল
না। যখন
সাহাবীরা তাকে দেখতেন
তখন তার জন্য কেউ দাঁড়াতেন না (অর্থাৎ কিয়াম করতেন
না) ; কারণ এ
ব্যাপারে সাহাবীরা রাসূল
(সাঃ) এর
অপছন্দনীয়তা জানতেন
(অর্থাৎ তার সম্মানের জন্য দাঁড়ানো বা কিয়াম
করা তিনি স্বয়ং নিজে
অপছন্দ করতেন)। [প্রমান
দেখুনঃ তিরমিযী শরীফ , ৫ম
খন্ড , অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার ,
হাদীস নং – ২৭৫৪ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বাংলাদেশ) , ২৬৯১
(মিনা বুক হাউজ , পৃষ্ঠা নং -
৭৮৩) ; ইমাম বোখারীর
আদাবুল মুরফাদ , হাদীস নং –
৯৫৪ , প্রকাঃ আহসান পাবলিকেশন্স ; সিলসিলাতুল
আহাদীসুস সহীহাহ , ১ম
খন্ড , হাদীস নং – ৩৫৮ (মূল
গ্রন্থ) , ৩৯৬
(বাংলা অনুবাদকৃত) ,
পৃষ্ঠা নং ৩৪১ , প্রকাঃ আতিফা পাবলিকেশন্স
; শারহে মায়ানিল আসার
তাহাবী শরীফ , ২/৩৯
পৃষ্ঠা ; মুসনাদে আহমদ ,
৩/১৩২ পৃষ্ঠা ; মুসনাদে আবু
ইয়ালা , ২/১৮৩ পৃষ্ঠা ; সনদঃ সহীহ]
(২) আবু মিজলায (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন ,
একদা সাহাবী মুয়াবিয়া (
রাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন।
সেখানে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) ও
আবদুল্লাহ ইবনু আমির (রাঃ)
ছিলেন। অতঃপর ইবনু আমির
(রাঃ)
(সাহাবী মুয়াবিয়া (রাঃ)
এর সম্মানে) দাড়িয়ে গেলেন অর্থাৎ
কিয়াম করলেন এবং ইবনু
যুবাইর (রাঃ) বসেই
থাকলেন। কারণ
মুয়াবিয়া (রাঃ) তাদের
চেয়ে অধিক সম্মানী ছিলেন। অতঃপর
মুয়াবিয়া (রাঃ)
বললেনঃ হে আবদুল্লাহ
ইবনে আমির ! তুমি বসে যাও।
কারণ আমি রাসুল (সাঃ)
কে বলে শুনেছি , “ যে ব্যাক্তি এটা পছন্দ
করে যে মানুষ তার
(সম্মানের) জন্য
দাঁড়াবে অর্থাৎ কিয়াম
করবে তবে সে তার
ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল ”।
[প্রমান
দেখুনঃ তিরমিযী শরীফ , ৫ম
খন্ড , অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার ,
হাদীস নং – ২৭৫৫
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) , ২৬৯২
(মিনা বুক হাউজ , পৃষ্ঠা নং -
৭৮৩) ; সুনানে আবু দাউদ
শরীফ , হাদীস নং – ৫১৪১ ,
প্রকাঃ মিনা বুক হাউজ ,
পৃষ্ঠা নং ১০৮৯ ; ইমাম বোখারীর আদাবুল মুরফাদ ,
হাদীস নং – ৯৭৭ (মূল
গ্রন্থ) , ; সিলসিলাতুল
আহাদীসুস সহীহাহ , ১ম
খন্ড , হাদীস নং – ৩৫৭ (মূল
আরবী গ্রন্থ) , ৪০৩ (বাংলা অনুবাদকৃত) ,
পৃষ্ঠা নং ৩৪৬ ,
প্রকাঃ আতিফা পাবলিকেশন্স
; শারহে মায়ানিল আসার
তাহাবী শরীফ , ২/৪০
পৃষ্ঠা ; মুসনাদে আহমদ , ৪/৯৩ , ১০০ পৃষ্ঠা ; আল –
আসামা ওয়াল কুনার , ১/৯৫
পৃষ্ঠা ; আল ফাওয়ায়েদুল
মুনতাকাত , ২/১৯৬ পৃষ্ঠা ;
মুসনাদে আবদ ইবনে আল
মুনতাখাব মিনাল , ২/৫১ পৃষ্ঠা ; আখবারে আসবাহান ,
১/২১৯ ; সনদঃ সহীহ]
(৩) আবু উমামা (রাঃ)
হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন
একবার রাসুল (সাঃ)
লাঠি ভর দিয়ে আমাদের সামনে আসেন। তখন
আমরা তার
সম্মানে দাঁড়ালে অর্থাৎ
কিয়াম করলে , রাসূল (সাঃ)
বলেনঃ তোমরা অনারবদের
ন্যায় একে অন্যের সম্মানে দাঁড়াবে না।
[প্রমান দেখুনঃ- সুনানে আবু
দাউদ শরীফ , হাদীস নং –
৫১৪২ , প্রকাঃ মিনা বুক
হাউজ , পৃষ্ঠা নং – ১০৮৯ ;
মিশকাত শরীফ ; সনদঃ শাহেদ] মীলাদ সম্পর্কে পৃথিবীর বড়
বড় আলেমদের মন্তব্য
ü বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর
গ্রন্থ তাফসীর ইবনু
কাসীরের লেখক মীলাদ
প্রবর্তনকারীদের উদ্দেশে বলেন –
তারা কাফির ও ফাসিক
(মুহাম্মদ বিন জামিল যাইনু
রচিত বাংলায় অনুবাদকৃত
মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পাথেয়
এর ৭৭ পৃঃ) ü হানাফী মাযহাবের
বিখ্যাত আলেম
মাওলানা আশরাফ
আলী থানবী তার রচিত
কিতাবে বলেনঃ মীলাদ
অনুষ্ঠান শরীয়াতে একেবারেই
নাজায়িয ও গুনাহের কাজ।
(তরীকায়ে মওলেদ)।
তিনি আরও বলেনঃ মীলাদ ও
এর কিয়াম যা নতুন আবিষ্কৃত
ও নিষিদ্ধ বিষয় সমূহের অন্তর্ভুক্ত তা নাজায়িয ও
বিদআত আর
হাদীসে আছে “প্রত্যেক
বিদআতই গোমরাহী, মহাপাপ
(বেহেশতী জেওর ও
তরীকায়ে মওলেদ)। ü আলাম্মা আনোয়ার শাহ্
কাশ্মিরী বলেনঃ বর্তমানে
প্রচলিত মীলাদ ৬০০
হিজরীতে ইরবিলের
সুলতানের যুগে চালু হয়।
শরীয়াতে মুহাম্মাদীতে এর কোন অস্তিত্ব নেই বরং এই
বিদআত সম্পর্কে এমন কোন
কিতাব নাই যা হাফিজ ও
মুহাদ্দিসীনদের
হাতে নেবার উপযুক্ত। ( আল-
আরফুশ – শাজী ও আল জামে তিরমিযী ২৩২ পৃঃ)।
ü হানাফী মাযহাবের
বিখ্যাত আলিম
আলাম্মা তাজুদ্দীন
ফাকেহানী মীলাদ অনুষ্ঠান
সম্পর্কে বলেছেনঃ আমি পবিত্র কোরআনে ও
হাদীসে মীলাদ মাহফিলের
কোন প্রমাণ পাইনি।
উম্মতে মুহাম্মাদীর
মধ্যে দ্বীন ইসলাম
সম্পর্কে বিজ্ঞ মহামতি নেতৃস্থানীয়
ওলামাগনের কেউই মীলাদ
পড়েছেন বা করেছেন এমন
কোন রিওয়ায়াতও বর্ণিত
হয়নি। বরং এই মীলাদ
একান্তই নতুন আবিষ্কৃত বিদআত এবং পেটপূজার জন্যই
এই মীলাদ আবিষ্কৃত হয়েছে।
(মদখুল
ফাতাওয়ায়ে সাত্তারিয়া ১ম
খন্ড, ১৭৯ পৃঃ)
ü ইমাম আহমদ বসরী নিজ পুস্তক কওল-ই-মু’তামাদ এর
মধ্যে লিখেছেনঃ চার
মাযহাবের ইমাম ও আলেমগণ
মীলাদ অনুষ্ঠানের উপর
দোষারোপে ঐকমত প্রকাশ
করেছেন। ü বর্তমান সময়ের অন্যতম
সবচেয়ে জনপ্রিয় সুনামধন্য
আন্তর্জাতিক আলেম, লেখক,
বক্তা ও ইসলামিক রিসার্চ
ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান
ডাঃ জাকির নায়েক বলেনঃ মীলাদ মাহফিল
একটি নতুন আবিষ্কৃত বিদআত
এবং ইসলামের মধ্যে গন্য
নয়। মুসলিমদের এর
থেকে সাবধান ও
বেচে থাকা উচিত এবং কোরআন ও সহীহ
হাদীসের অনুসরন
করা উচিত। (ডাঃ জাকির
নায়েকের লেকচার সমগ্র,
ইসলাম কেন্দ্রবিন্দু,
পৃঃ ৩১৭, প্রকাঃমিনা) ü সৌদি আরবের সকল
মুফতীদের প্রধান,
মহাপরিচালক -
ইসলামী গবেষণা ও
ফতোয়া অধিদপ্তর ও উচ্চ
ওলামা পরিষদের প্রধান এবং ধর্মমন্ত্রী শায়েখ
আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ
বিন বায (রঃ) বলেন, মীলাদ
পালন করা জায়েয নয়,
বরং তা থেকে বিরত
থাকা আবশ্যক। (শায়খ সালেহ ফাওযান আল-ফাওযান
রচিত “বিদআত
থেকে সাবধান” পুস্তকের
পৃঃ ২৬, প্রকাঃতাওঃ)।
ü ইমাম
ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন, অনেক বিদআতের
মধ্যে একটি হল মীলাদ
মাহফিলের আয়োজন
করা (শায়খ সালেহ ফাওযান
আল-ফাওযান রচিত “বিদআত
থেকে সাবধান” পুস্তকের পৃঃ ২৫, প্রকাঃতাওঃ)।
বিদআতের ভয়াবহ পরিনাম
বিদআত সম্পর্কিত যেসব
সহীহ হাদীস পাওয়া যায়
তা হলঃ
ü আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত - রাসুল (সাঃ)
বলেছেন, আমাদের এই
দ্বীনের মাঝে যদি কেউ নতুন
কিছু উদ্ভাবন বা আবিষ্কার
করে তা পরিত্যজ্য অর্থাৎ
বাতিল। (সুনানে ইবনে মাজাহ,
অধ্যায়- ১, হাদীস নং- ১৪,
পৃঃ- ৪৫ ; মেশকাত শরীফ, ১ম
খন্ড, হাদীস- ১৩৩, পৃঃ- ৪৬
প্রকাঃমিনা ; একই প্রসঙ্গ -
মুসনাদে আহমাদ, খন্ড-১, অধ্যায়- ৫, পরিচ্ছেদ- ৩,
হাদীস নং- ১৭, পৃঃ- ১৬২,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
ü রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
দ্বীনের মাঝে নতুন কিছু
আবিষ্কার করা অর্থাৎ বিদআত সবচেয়ে মন্দকাজ
এবং প্রত্যেক বিদআতই
গোমরাহী।
(সুনানে ইবনে মাজাহ,
অধ্যায়- ১, অনুচ্ছেদ-৭,
হাদীস নং- ৪৫ ও ৪৬ , পৃঃ- ৫১ ; মেশকাত শরীফ, ১ম খন্ড,
হাদীস- ১৩৪, পৃঃ- ৪৬
প্রকাঃমিনা, একই প্রসঙ্গ -
বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ
- মুসনাদে আহমাদ, খন্ড-১,
অধ্যায়- ৫, হাদীস নং- ১৪, পৃঃ- ১৬১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন)
ü রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
আল্লাহ্ বিদাআতী ব্যাক্তির
সদকা, হজ্জ, উমরাহ্, জিহাদ,
ফিদইয়া, ন্যায় বিচার ইত্যাদি কিছুই কবুল
করা হবে না। সে ইসলাম
থেকে এভাবে বের
হয়ে যাবে যেভাবে আটা
থেকে চুল বের করা হয়।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়- ১, অনুচ্ছেদ-৭,
হাদীস নং- ৪৯ , পৃঃ- ৫২,
প্রকাঃমিনা)
মানুষের ভুল
ধারণা এবং একটি অতি
প্রয়োজনীয় তথ্য এখন সাধারন মানুষের
মনে প্রশ্ন
জাগতে পারে যে আমাদের এই
দেশে তো অধিকাংশ মানুষই
এই মীলাদ পড়তেছে , তখন
তারা আজুহাত দেখিয়ে বলে যেহেতু
এতগুলো মানুষ
এবং আলেমরা মীলাদ
পড়ে থাকে তাই
এটা পড়লে কোন সমস্যা নাই
কারন এতগুলো মানুষ তো আর ভুল হতে পারে না কিন্তু
আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র
কোরআনে এর বিপরীত
কথা বলিতেছে। পৃথিবীর
বেশির ভাগ মানুষই অর্থাৎ
অধিকাংশ মানুষই যে জ্ঞানহীন, অকৃতজ্ঞ, অজ্ঞ,
মূর্খ, নাফরমান, কাফির,
বিশ্বাসঘাতক,
সীমালঙ্ঘনকারী, ফাসেক
এবং এর বিপরীতে অল্প
সংখ্যক মানুষই যে ঈমানদার, মুমিন, জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান
এবং সত্যের
পথে পরিচালনাকারী তা
আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র
কোরআনের মাধ্যমেই
আমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছেন সুতরাং অধিকাংশ মানুষদের
দেখে ভুলটা আঁকড়ে ধরে
রাখার কোন মানে নেই।
অধিকাংশ মানুষদের
কে না দেখে আমাদেরকে
কোরআন এবং সহীহ হাদীস দেখতে হবে। এর প্রমাণ
কোরআনের নিচের আয়াত
গুলোর মধ্যেই পাওয়া যায়।
ü আপনি যদি দুনিয়ার
বেশীর ভাগ অর্থাৎ
অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চলেন,
তবে তারা আপনাকে আল্লাহ্র
পথ থেকে বিপথগামী করে
দিবে। তারা তো কেবল
ধারনার অনুসরন
করে এবং মনগড়া কথা বলে। ( সূরা আন’আম, আয়াত নং –
১১৬ )
ü আপনি (আল্লাহ্)
যদি আমাকে (ইবলিশ)
কেয়ামতের দিন পর্যন্ত
অবকাশ দিন তাহলে আমি মানুষদের
মধ্যে অল্প সংখ্যক ছাড়া তার
বেশীর ভাগ
বংশধরদেরকে আমার বশীভুত
করে ফেলব।
( সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং- ৬২)
ü তাদের (মানুষরা)
অধিকাংশই অনুমানের
অনুসরন করে চলে। সত্যের
ব্যাপারে অনুমান কোন
কাজেই আসে না। ( সূরা ইউনূসঃ ৩৬ )
ü আপনি যতই
আকাঙ্ক্ষা করেন না কেন,
অধিকাংশ মানুষই ঈমান
আনার নয়।
( সূরা ইউসূফঃ ১০৩ ) ü তাদের (মানুষরা) খুব কম
সংখ্যকই ঈমান আনে।
( সূরা বাকারা, আয়াত নং-
৮৮ ; সূরা নিসাঃ ৪৬ ও ১৫৫ )
ü তুমি সর্বদা তাদের অল্প
সংখ্যক ছাড়া সবাইকে দেখতে পাবে
কোন না কোন
বিশ্বাসঘাতকতা করতে।
( সূরা মায়িদাহঃ ১৩ )
ü মানুষদের মধ্যে অনেকেই
দুনিয়ায় সীমালংঘনকারীই রয়ে গেল।
( সূরা মায়িদাহঃ ৩২ )
ü তোমাদের (মানুষদের)
অধিকাংশই ফাসেক।
( সূরা মায়িদাহঃ ৫৯ ও ৮১ ;
সূরা তওবাঃ ৮ ) ü তাদের (মানুষরা)
অধিকাংশই নিকৃষ্ট কাজ
করে যাচ্ছে।
( সূরা মায়িদাহঃ ৬৬ )
ü তাদের (মানুষরা)
অধিকাংশই কোন জ্ঞান রাখে না।
( সূরা মায়িদাহঃ ১০৩ )
ü তাদের (মানুষরা)
অধিকাংশই অজ্ঞ – মূর্খ।
( সূরা আন’আমঃ ১১১ )
ü আমি তাদের অধিকাংশই লোককেই
ওয়াদা পালনকারী পাইনি
বরং তাদের
অধিকাংশকে আমি নাফরমান
পেয়েছি।
( সূরা আ’রাফঃ ১০২ ; সূরা মায়িদাহঃ ৪৯ )
বিঃদ্রঃ- মীলাদ সম্পর্কিত
এই রিসার্চ পেপারটি ক্ষুদ্র
হলেও পবিত্র কোরআন ও
হাদীস শরীফ এবং পৃথিবীর
বড় বড় নির্ভরযোগ্য ইমাম ও আলেমদের রচিত কিতাব
থেকে যথাসাধ্য সম্ভাব্য
সর্বাধিক
পরিমানে রেফারেন্স
প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে এ রিসার্চ
পেপারটি পৌছুক এবং সকলেই
সত্যটা জেনে বিদআত
পরিহার করে সুন্নাহর সঠিক
পথে থেকে আমল করে সেই
অনুযায়ী আল্লাহর সান্নিদ্ধ্য লাভ করুক
এবং সংশ্লিষ্ট
সকলকে আল্লাহ্ পুরস্কৃত করুন,
আমীন।
তাছাড়া যদি কম্পোজের
ক্ষেত্রে কোন ক্রুটি পাওয়া যায়,
তাহলে আশা রাখি তা
আপনারা ক্ষমার
দৃষ্টিতে দেখিবেন
এবং দয়া করে আমাদেরকে
জানালে ভবিষ্যতে সংশোধন বা সংযোজনের চেষ্টা করব,
ইনশা-আল্লাহ্।
*** বিনীত – মাহবুব হোসেন
অনিক , গবেষক
এবং চেয়ারম্যান -
ইসলামিক রিসার্চ লাইব্রেরী (আই.আর.এল),
নারায়ণগঞ্জ।, যোগাযোগ –
০১৬৮০৭১৬৫০৬।
No comments:
Post a Comment