Tuesday, June 30, 2015

এটি একটি গল্প নয় কিন্তু বাস্তবতা !! পর্ব এক I

এশার ছালাতের পর হোটেলে গেলাম নাস্তা করতে। ইয়ামেনী লোক দ্বারা পরিচালিত এক হোটেলে গিয়ে মাঝখানের এক টেবিলে গিয়ে
বসলাম।যথারীতি খাবারের অর্ডার দেয়ার পর টেবিল বয় খাবার আনল।
খাবার শুরুর এক দেড় মিনিটের মাথায় আমার পাশের টেবিলে এসে একজন সৌদি বসল। আড়চোখে দেখে লোকটাকে খুব সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত মনে হল। যথারীতি তার খাবারও চলে আসল। কয়েক আইটেম
খাবার নিয়ে লোকটিও খাবার খাওয়া শুরূ করল।যার যার মত করে
খাবার খাচ্ছি।এমন সময় ৫০/৫৫ ঊর্ধ এক ইয়ামেনী দম্পতি
প্রবেশ করল হোটেলে। তাদের পোষাক দেখে মনে হল তারা গরিব।গরিব হলেও কথাবার্তায় মনে হল শিক্ষিত। এরপর হোটেল বয়কে খাবারের অর্ডার দেয়ার পর সন্দেহ সঠিক প্রমান হল।এই দম্পতি আসলেই গরিব। তারা দুইজনে যে খাবার নিল তা কোন ভাবে একজনে খেতে পারে।বয় জিজ্ঞেস করল কোল্ড ড্রিংকস জাতীয় কিছু দিবে কিনা।সেই দম্পতি না করল।অথচ তারা যে খাবার অর্ডার দিয়েছে সেটার সাথে সাধারনত কোল্ড ড্রিংক জাতীয় কিছু খেতে হয়।এই সব ব্যাপারগুলি আমার মত সেই সৌদি লোকও খেয়াল করল।আমার মনে হল তিনি খাবারের
ফাকে ফাকে হোটেল বয় আর সেই দম্পতির কথাগুলী শুনার চেষ্টা করছিলেন।একটু পরেই সে সৌদি লোকটা বয়কে ডাকলেন এবং কানে কানে কি যেন বললেন। সাথে সাথে বয়টা আরো কিছু খাবার এনে সেই
স্বামী স্ত্রীর টেবিলে রাখলেন।হটাৎ নতুন দামী আইটেম দেখে সে দম্পতি একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বয়ের দিকে তাকাতেই বয় দ্রূত গিয়ে তাদের জন্য কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসল।বৃদ্ধ দম্পতি কিছুই বুঝতে পারল না। তারা তাকিয়ে রইল হোটেল বয়ের দিকে।সে সৌদি
লোকও আড়চোখে সব দেখছিলেন।আমিও খাবারের গতি কমিয়ে দিয়ে দেখতে লাগলাম শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখার জন্য। এবার সে দম্পতি বয়কে কাছে ডেকে কি যেন জিজ্ঞেস করল।মনে হয় প্রশ্ন করল এই সবের মানে কি। খাবার তারা অর্ডার দিল অল্প কিন্তু এসে গেল অনেক।
কোল্ড ড্রিংকস খাবে না বলল কিন্তু কোল্ড ড্রিংকস হাজির। এবার বয় ইশারা করে সেই সৌদিকে দেখিয়ে দিল এবং বলল উনিই এসব করতে বলেছেন।আর সবকিছুর হিসাবও তিনিই দিবেন। বয়ের কথা শুনে স্বামী স্ত্রী দুজনই সেই সৌদির দিকে তাকিয়ে বলল,"শোকরান"।আমি লক্ষ্য
করলাম, শোকরান বলার সময় মহিলার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।আর সেই পুরূষটি মাথা নিচু করেই শুকরান বলল।মনে হল, এমন একটা
পরিস্তিতির জন্য সে লোকটা প্রস্তুত ছিল না এবং সে খুব আত্নসম্মান সংকটে ভুগছিল। আগাগোড়া সব কিছুর আমি ৫ম ব্যক্তি সাক্ষী হয়ে
রইলাম।সেই সৌদিকে দেখে আমার মনে হল দাঁড়িয়ে সালাম করি।
পরে যখন সৌদি লোকটা খাবার শেষ হল আমিও তার পিছে পিছে আসলাম ক্যাশ কাউন্টারের দিকে।শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখার লোভ
সামলাতে পারলাম না। আমি আমার বিল দিয়ে টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে সৌদির বিল দেওয়া দেখছিলাম।বিল কত জিজ্ঞেস করতেই বয় পুরা ঘটনা ক্যাশিয়ারকে খুলে বলল এবং বিলের হিসাব দিল ৬৫ রিয়াল।সৌদি লোক একটা ১০০ রিয়ালের নোট বের করে দিলে ক্যাশিয়ার সৌদি লোকটাকে ৪০ রিয়াল ফেরত দিল। সৌদি ৫ রিয়াল উল্টা ফেরত দিলে ক্যাশিয়ার বলল, "আনা শরিক সাওয়া সাওয়া " মানে আমিও তোমার সাথে এই মহৎ কাজের অংশীদার হতে চাই।তারপর আমি বেরিয়ে পড়লাম হোটেল থেকে।
হাটতে হাটতে চিন্তা করলাম,আশে পাশে কত মানুষ কত ভাবে আছে যাদের কাছ থেকে না দেখলে বুঝা যায় না তাদের ভিতরের চেহারা। এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটে সাউদিতে নিজের চোখে দেখা, শোনা! আমরাও কি পারিনা আমাদের ক্ষুদ্র পরিসরে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে!
(সংরহিত পোস্ট)

No comments:

Post a Comment