স্ত্রীর ভরণ পোষণের দায়িত্ব স্বামীর ঃ
আসসালামু আলাইকুম
বাসস্থান ও খাদ্য-বস্ত্রের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা স্বামীর উপর ওয়াজিব। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। তা অবশ্যই স্বামীর সামর্থ্যরে আওতায় হতে হবে। পরস্পরের ইচ্ছানুযায়ী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, একে অপরের জন্য আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সংগ্রহ করে দেয়া স্বামীর কর্তব্য। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন—
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ
(النساء: من الآية৩৪)
পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ্ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এজন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। (সূরা নেসা ৩৪)
আল্লাহ্ তা‘আলা অনত্র বলেন—
لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللهُ لا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْساً إِلاَّ مَا آتَاهَا
(الطلاق: من الآية৭)
বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিক প্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করবে আল্লাহ্ যাকে যা দিয়েছেন তদাপেক্ষা বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ্ প্রত্যেকের উপর তার সামর্থ্য অনুসারেই দায়িত্ব অর্পন করে থাকেন (সূরা ত্বালাক ৭)। আয়াত দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রীর ভরণ পোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর। স্ত্রীর ব্যয় ভারের কোন পরিমাণ শরীয়তে নির্দিষ্ট নেই। বরং তা বিচার বিবেচনার উপরই রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অবস্থা বিবেচ্য।
عَنْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ
إِنَّ لِزَوْزِكَ عَلَيْكَ حَقًّا
নিশ্চয়ই তোমার স্ত্রীর তোমার উপর অধিকার রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হাঃ/২০৫৪ ছিয়াম অধ্যায় নফল ছিয়াম অনুচ্ছেদ)
عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ قَالَ أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ أَوْ اكْتَسَبْتَ وَلاَ تَضْرِبْ الْوَجْهَ وَلاَ تُقَبِّحْ وَلاَ تَهْجُرْ إِلاَّ فِي الْبَيْتِ
হাকীম ইবনে মু‘আবীয়া কুশাইরী (রা) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তার পিতা বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল(ﷺ) ! আমাদের কারও স্ত্রীর ‘স্বামীর প্রতি’ কি কর্তব্য রয়েছে? রাসূল (ﷺ) বললেন, তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন কাপড় পরিধান করবে, তাকেও পরিধান করাবে। তার মুখের উপর মার না, তাকে কটুকথা বল না, আর তাকে তোমার বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও থাকতে সুযোগ দিও না (আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, মিশকাত হাঃ/৩২৫৯, বাংলা মিশকাত হাঃ/৩১২০)।
এখানে কয়েকটি বিষয়ে স্বামীকে সতর্ক করা হয়েছে। যার প্রতি যথাযথ লক্ষ্য রাখা স্বামীর জন্য অপরিহার্য।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ
إِبْدَأْ بِمَنْ تَعُوْلُ
আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তুমি তোমার পরিবারের প্রতি ব্যয় কর। (মুসলিম, মিশকাত হাঃ/১৯২৯)।
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الْأَنْصَارِيِّ فَقُلْتُ عَنِ النَّبِيِّ فَقَالَ عَنِ النَّبِيِّ
قَالَ إِذَا أَنْفَقَ الْمُسْلِمُ نَفَقَةً عَلَى أَهْلِهِ وَهُوَ يَحْتَسِبُهَا كَانَتْ لَهُ صَدَقَةً
আবু মাসঊদ আনছারী (রা) বলেন, রাসূল বলেন ঃ যখন কোন ‘মুসলিম’ আপন পরিবারের প্রতি ব্যয় করে এবং নেকীর আশা রাখে তা তার জন্য দান স্বরূপ হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হাঃ/১৯৩০, যাকাত অধ্যায় উত্তম দান অনুচ্ছেদ)। অত্র হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রী-পরিবারের ব্যয় ভার স্বামীর উপর।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ دَخَلَتْ هِنْدٌ بِنْتُ عُتْبَةَ امْرَأَةُ أَبِي سُفْيَانَ عَلَى رَسُولِ اللهِ
فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أَبَا سُفْيَانَ رَجُلٌ شَحِيحٌ لاَ يُعْطِينِي مِنْ النَّفَقَةِ مَا يَكْفِينِي وَيَكْفِي بَنِيَّ إِلاَّ مَا أَخَذْتُ مِنْ مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمِهِ فَهَلْ عَلَيَّ فِي ذَلِكَ مِنْ جُنَاحٍ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ خُذِي مِنْ مَالِهِ بِالْمَعْرُوفِ مَا يَكْفِيكِ وَيَكْفِي بَنِيكِ
আয়েশা (রা) বলেন, উৎবার মেয়ে হিন্দা আবু সুফিয়ানের স্ত্রী, রাসূল (ﷺ) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) ! আবু সুফিয়ান কৃপণ মানুষ। সে আমার এবং আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খরচ দেয় না— এমতাবস্থায়, তাকে না জানিয়ে তার অর্থ হতে কিছু নিলে গুনাহ হবে কি? নবী (ﷺ) বললেন, ন্যায্যভাবে তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খরচ নিয়ে যাও। (বুখারী, মুসলিম, বুলূগুল মারাম হয়/১১৬৮)
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولِ اللهِ
لَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
জাবির (রা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, নারীদের খাদ্য ও ‘পোশাকের’ ব্যয়ভার ন্যায্যভাবে বহন করা, তোমাদের জন্য অপরিহার্য। (মুসলিম, বুলূগুল মারাম হাঃ/১১৭২)।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ
كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ
আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, মানুষের গুনাগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, পরিবারের ব্যয় ভার বহন না করে তাদের নষ্ট করে (নাসাঈ, বুলূগুল মারাম হা/১১৭৩)। অত্র হাদীসে বলা হয়েছে যে, পরিবারের ব্যয়ভার বহন করে না, সে তার পরিবারকে ধ্বংস করে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ
كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يَحْبِسَ عَمَّنْ يَمْلِكُ قُوتَهُ
আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, মানুষের গুনাগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার পরিবারের খরচ বন্ধ করে দেয়। (মুসলিম, বুলূগুল মারাম হা/১১৭৩)
عَنْ عُمَرَ أَنَّهُ كَتَبَ إِلَى أُمْرَاءَ الأَجْنَادِ فِيْ رِجَالٍ غَابُوْا عَنْ نِسَائِهِمْ أَنْ يَّأْخُذُوْاهُمْ بِأَنْ يُّنْفِقُوْا أَوْ يُطَلِّقُوْا فَإِنْ طَلَّقُوْا بَعَثُوْا بِنَفْقَةٍ مَا حَسَبُوْا
ওমর (রা) সৈন্য বাহিনীর পরিচালক বৃন্দের কাছে লিখেছিলেন, যে সব পুরুষ তাদের স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকছে, তারা তাদের স্ত্রীদের খরচ বহন করবে, আর না হয়, তাদের তালাক প্রদান করবে। যদি তালাক দেয় তা’হলে এতোদিন যে, খরচ না দিয়ে স্ত্রী হিসেবে আবদ্ধ রেখেছে, তার খরচ প্রদান করুক। (বায়হাকী, বুলূগুল মারাম হয়/১১৭৭, হাদীছ হাসান)
No comments:
Post a Comment