সালাতে জামায়াতে দাঁড়ানোর পদ্ধতি:
সালাতে কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে দুই পার্শ্বের ব্যক্তির পা মিলিয়ে দাঁড়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়ানো গুনাহ। খুব কঠিনভাবেই এব্যাপারে আল্লাহ্র রাসুল ﷺ নির্দেশ দিয়েছেন।
হযরত আনাস (রা:)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন,তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর এবং পরষ্পর মিলিত হয়ে দাড়াও। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পিছনের দিকেও দেখতে পাই। তখন আমরা আমাদের পার্শ্বের ব্যক্তির সাথে কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলয়ে দাঁড়াতাম। (সহিহ বুখারী, ২য় খন্ড, আযান অধ্যায়, হাদিস নং- ৬৮৯)
নুমান ইবনে বাশীর (রাযি) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন। (সহিহ বুখারী, হা/৬৬২)
আবু মাসউদ আনসারী (রা)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ ﷺ নামাযে (দাড়ালে) আমাদের বাহুমূলসমূহে হাত স্পর্শ করে পরষ্পর মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন তোমরা সোজা হয়ে দাড়াও, বিভিন্নরূপে দাড়িও না, তা হলে তোমাদের অন্তরসমূহও প্রভেদ হয়ে যাবে। (মুসলিম,মিশকাত হা/১০১৯)।
হযরত আনাস (রাযি)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ,রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা কাতারের মধ্যে পরষ্পর মিশে দাড়াও। সারিগুলোকে কাছাকাছি রাখ এবং তোমাদের ঘাড়গুলিকে সমভাবে সোজা রাখ। সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় আমি কালো ভেড়ার বাচ্চার মত শয়তানকে দেখি সে সারির ফাকে প্রবেশ করে। (আবু দাউদ)
সালাতের শুরুতে মুখে উচ্চারণগত কোন নিয়াত নেই। নিয়াত হচ্ছে অন্তরের সংকল্প।
তাই মুখে "নাওয়াইতুয়ান উসালিয়ালিল্লাহি..." পড়া বিদআত।
সালাত শুরু করতে হবে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর তাহরীমা দিয়েঃ
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী, সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ বাকর আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) সালিম-এর পিতা ইবনু উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি তিনি যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন। এমনকি তা একেবারে তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। আর রুকু করার এবং যখন রুকু থেকে উঠতেন (তখনো অনুরুপ ভাবে হাত উঠাতেন)। কিন্তু উভয় সিজদার মাঝখানে তিনি হাত উঠাতেন না। (সহিহ মুসলিম, ১ম খন্ড, কিতাবুস স্বালাত, হাদিস নং ৭৪৫)
হাত রাখার স্থানঃ
রাসুল ﷺ হাত নাভীর উপরে বা বুকে বাঁধতেন। আর ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখতেন, কব্জি নয়।
(আবু দাউদ, ১ম খন্ড, কিতাবুস স্বালাত, হাদিস নং- ৭৫৯
উল্লেখ্য যে- রাফাউল ইয়াদাইন করার পিছনে একটি বগলে মূর্তি রাখার কাহিনী প্রচলিত রয়েছে তা বানোয়াট ও মিথ্যা।
স্বালাতে প্রত্যেক রাকআতে সুরা ফাতিহা অবশ্যই পড়তে হবে, একাকী সালাত হোক বা ইমামের পিছনে, ইমাম জোরে কিরাত পড়ুক বা নীরবে, স্বালাতে প্রত্যেক রাকআতে সুরা ফাতিহা পড়াতেই হবে। এটা অত্যাবশ্যক!!!
"একদা ফজরের স্বালাতে কিছু সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সাঃ) এর সাথে সাথে কিরাত পড়ছিলেন, যার কারনে রাসুল (সাঃ) এর ইমামতি করতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) এর কিরাত পাঠ করা ভারী হয়ে গেল। স্বালাত শেষে রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞাস করলেন- তোমরাও কি কুরআন পরছিলে? তারা বললেন- হ্যাঁ। তিনি বললেন- তোমরা এরকম করোনা, তবে সুরা ফাতিহা অবশ্যই পরবে। কারন যে তা পড়ে না তার স্বালাত হয় না। (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী)
অনুরূপ আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণীত হয়েছে- নাবী (সাঃ) বলেছেন, তার স্বালাত অসম্পূর্ণ, তার স্বালাত অসম্পূর্ণ, তার স্বালাত অসম্পূর্ণ যে ব্যক্তি সুরা ফাতহা ছাড়া নামায পড়ল। (সহিহ মুসলিম, ১ম খন্ড, কিতাবুস স্বালাত, হাদিস নং ৭৫৮)
এই হাদিসে রাসুল (সাঃ) একটি কথা তিনবার বলেছেন। তাই স্বালাতে সুরা ফাতহা পড়ার গুরুত্ব যে কতখানি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আবু হুরাইরা (রাঃ) কে জিজ্ঞাস করা হল- আমরা তো ইমামের পিছনেও নামায পড়ি তখন আমরা কি করব? তিনি বলেন- তোমরা সুরা ফাতিহা ইমামের পিছনে মনে মনে পড়বে। (সহিহ মুসলিম)
সালাতে রুকু, সিজদাহ, রুকু থেকে দাঁড়ানো, দুই সিজদার মাঝে বসা সহ সম্পূর্ণ সালাত ধীরতার সাথে পড়া অত্যাবশ্যক। না হলে সালাত বাতিল হবে।
মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক বার রাসুলুল্লাহ ﷺ মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন একটি লোক প্রবেশ করল। সে সালাত আদায় করল। তারপর এসে রাসুলুল্লাহ ﷺ –কে সালাম করল। সালামের জবাব দিয়ে বললেন , তুমি ফিরে গিয়ে সালাত আদায় কর। কারণ তোমার সালাত হয়নি। লোকটি ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করল। তারপর রাসুলুল্লাহ ﷺ –এর কাছে এসে সালাম করল। রাসূলল্লাহ উত্তর দিয়ে বললেন , তুমি গিয়ে সালাত আদায় কর। কারণ তোমার সালাত হয়নি। এইরূপ তিন বার করলেন। অতঃপর লোকটি বলল, আপনাকে সত্য নাবী ﷺ করে পাঠিয়েছেন সেই সত্তার কসম! সালাত আদায়ের এর চেয়ে ভাল কোন পন্হা থাকলে আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন , যখন তুমি সালাত -এর জন্য দাড়াবে তখন তাকবীর বলবে। তারপর তুমি কুরআনের যতটুকু জানো তা থেকে যা সহজ হয় তাই পাঠ করবে। তারপর রুকু করবে। এমন কি নিবিষ্ট ভাবে (কিছুক্ষণ) রুকু করতে থাকবে। তারপর (রুকু থেকে) উঠবে, সোজা ভাবে (কিছুক্ষণ) দণ্ডায়মান থাকবে। তারপর সিজদা করবে। (কিছুক্ষণ) নিবিষ্ট ভাবে সিজদারত থাকবে। তারপর উঠে বসবে। এবং (কিছুক্ষণ) সোজা ভাবে বসে থাকবে। তোমার গোটা সালাত-ই এরুপ করবে।
সিজদাহর সময় সময় কুকুরের মত দু-হাত বিছিয়ে দেয়া নিষেধঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন, আমি নাবী ﷺ বলেন, সিহদায় তোমরা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভারসাম্য রক্ষা করা। সিজদাহর সময় সময় কেউ যেন দু-হাত কুকুরের মত বিছিয়ে না দেয়। (সহিহ বুখারী, ২য় খন্ড, আযান অধ্যায়, হাদিস নং- ৭৮৪)
বিজোড় রাকআত গুলোতে সরাসরি না দাড়িয়ে একটু বসে তারপর উঠতে হবেঃ
মালিক ইবনে হুরাইসি (রাঃ) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন, আমি নাবী ﷺ কে সালাত আদায় করতে দেখেছি, তিনি বিজোড় রাকআতে সিজদাহ থেকে উঠে না বসে দাঁড়াতেন না। (সহিহ বুখারী, ২য় খন্ড, আযান অধ্যায়, হাদিস নং- ৭৮৫)
তাশাহুদের সময় আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল উঠাতে হবে এমন কথা কোথাও নেই, বরং বসার পুরোটা সময়-ই শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) থেকে বর্ণীত, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন স্বালাতে তাশাহুদ পাঠ করতে তখন শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। (আবু দাউদ, ২য় খন্ড কিতাবুস স্বালাত, হাদিস নং- ৯৮৯)
No comments:
Post a Comment