পরিপূর্ণ পর্দা না করার পেছনে অধুনা মুসলিম নারীদের অজুহাত: ০৩
“আসলে আমি যাদের সাথে যে সমাজে চলাফেরা করি, সেখানে আমার বর্তমান ড্রেসআপ বাদ দিয়ে ইসলামিক পোশাক মেনে চলা সম্ভব না।”
এ ধরনের কথার পেছনে দুটো কারণ থাকতে পারে:
হিজাবের ব্যাপারে তিনি হয়তো আন্তরিক ও সৎ কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় হিজাব নিয়ে দোনোমনায় ভুগছেন। আবার এমনও হতে পারে, হালফ্যাশনের সাথে তাল মেলাতে যেয়ে তিনি শুধু মাথায় রংচঙা স্কার্ফ পড়েন; পরিপূর্ণ পর্দার ব্যাপারে মোটেও আন্তরিক নন।
পারিপার্শ্বিক অবস্থান ও মানসম্মানের ভয়ে যে বোনটি পর্দা করতে পারছেন না, তাঁর প্রতি আমাদের পরামর্শ: বোন, আপনি কি এটা জানেন না যে, পরিপূর্ণ পর্দার শর্ত পূরণ না করে কোনো অবস্থাতেই একজন নারীর ঘর থেকে—যে কোনো প্রয়োজনেই হোক—বের হওয়ার অনুমতি আল্লাহ দেননি?
প্রতিটা মুসলিম নারীরই দায়িত্ব ইসলাম তাঁদের কী মর্যাদা দিয়েছে, ইসলাম তাঁদের কী করতে বলেছে সেগুলো জানা; সর্বোপরি ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম বেসিক জ্ঞান অর্জন করা। প্রচুর সময় ও শ্রম ব্যয় করে আপনি কত কিছু শিখে নিচ্ছেন, কিন্তু যে জ্ঞান আপনাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখবে, মৃত্যুর পর আল্লাহর ক্রোধ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে, সেই জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারেই আপনার যত অবহেলা?
আল্লাহ কি বলেননি,
“যদি তোমাদের জানা না থাকে, তাহলে জ্ঞানী ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস করো।” [সূরা আন-নাহ্ল, ১৬:৪৩]
কাজেই পরিপূর্ণ পর্দার জন্য কী কী প্রয়োজন সেটা শিখুন।
কোনো কাজে বা বিশেষ প্রয়োজনে যদি বাইরে যেতে হয়, তাহলে অবশ্যই যাবেন। তবে সঠিকভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়ে বের হবেন। শয়তানের কূটচালকে ধ্বংসের নিমিত্তে এগিয়ে যাবেন। কারণ যে প্রয়োজনে আপনি বের হচ্ছেন, তার চেয়ে নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শনের ফলে সমাজে সেটা যে পরিমাণ দূষণ ছড়াবে তা অনেক অনেক বেশি মারাত্মক।
বোন, আপনি যদি আপনার নিয়্যাতের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হন, এবং পরিপূর্ণ পর্দার ব্যাপারে আসলেই আন্তরিক হন, তাহলে মানসিকভাবে দৃঢ় হন। একবার যখন ইসলাম মানা শুরু করবেন তখন দেখবেন আপনাকে সাহায্য করার জন্য হাজারো হাত এগিয়ে আসছে। আপনার মন যদি ইসলামের কোনো বিধানের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে আল্লাহ আপনার কাজ সহজ করে দেবেন। কারণ তিনিই তো বলেছেন,
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য সংকট থেকে বের হওয়ার পথ করে দেবেন। আর তাকে এমন জায়গা থেকে জীবিকার ব্যবস্থা করে দেবেন যা সে কখনো কল্পনাও করতে পারে না।” [সূরা আত-তালাক, ৬৫:২-৩]
অন্যদিকে আমাদের যে বোনটি হালফ্যাশনের জালে আটকা পড়েছেন তার জন্য আমাদের পরামর্শ:
সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার মালিক আল্লাহ তা‘আলা। পোশাকের আভিজাত্য, হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এগুলো কারও সম্মান ও মর্যাদা নির্ধারণ করতে পারে না। কেবল আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহকের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর শারী‘আহর বিধিবিধান মেনে পরিপূর্ণ পর্দার মাধ্যমেই নিজের আত্ম-মর্যাদা ও সম্মান নির্ধারিত হয়। শুনুন এ ব্যাপারে আল্লাহ কী বলছেন,
“তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি ধার্মিক, আল্লাহর কাছে সে-ই সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী।” [সূরা আল-হুজুরাত, ৪৯:১৩]
কাজেই সেই দিনকে ভয় করুন, যেদিন আজকের কথিত প্রগতিশীল, মর্যাদাসম্পন্ন নারীদের ডেকে আল্লাহ বলবেন,
“আজকের এই শাস্তি উপভোগ করো! পৃথিবীতে তো নিজেকে খুব শক্তিশালী সম্ভ্রান্ত মনে করতে! এটাই সেই শাস্তি, যে ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ করতে।” [সূরা আদ-দুখান, ৪৯:৫০]
সংক্ষেপে: আল্লাহর বিধিনিষেধ অমান্য করে, তাঁর ক্রোধ অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব না। সম্ভব না জান্নাতে পৌঁছা। পৃথিবীতে কে আপনাকে সম্মান দিল, আর কে দিল না, কোন পোশাকে লোকে আপনাকে সুন্দর বলল, আর কে বলল না, এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা করুন কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য, আল্লাহর কাছে সম্মানিত হওয়ার জন্য।
No comments:
Post a Comment