Friday, August 7, 2015

নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতি একই না ভিন্ন্য প্রকার,?



<<<<<<নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতি একই না ভিন্ন্য প্রকার,?>>>>>>
পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি একই প্রকার।
সুতরাং মহিলাও ঐরুপ একই তরীকায় নামায পড়বে, যেরুপ ও যে তরীকায় পুরুষ পড়ে থাকে।
কারণ, (নারী-পুরুষ উভয় জাতির) উম্মতকে সম্বোধন করে রসূল (সাঃ) বলেছেন,
“তোমরা সেইরুপ নামায পড়, যেরুপ আমাকে পড়তে দেখেছ।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৮৩নং)
আর উভয়ের নামায পৃথক হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীলও নেই।
সুতরাং যে আদেশ শরীয়ত পুরুষদেরকে করেছে, সে আদেশ মহিলাদের জন্যও
এবং যে সাধারণ আদেশ মহিলাদেরকে করেছে তাও পুরুষদের ক্ষেত্রে পালনীয় -যদি বিশেষ হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার দলীল না থাকে।
যেমন, “যারা সতী মহিলাদের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদের জন্য শাস্তি হল ৮০ কোড়া-।
(কুরআন মাজীদ ২৪/৪)
পরন্তু যদি কেউ কোন সৎ পুরুষকে অনুরুপ অপবাদ দেয়, তবে তার জন্যও ঐ একই শাস্তি প্রযোজ্য।
সুতরাং মহিলারাও তাদের নামাযে পুরুষদের মতই হাত তুলবে, পিঠ লম্বা করে রুকূ করবে, সিজদায় জানু হতে পেট ও পায়ের রলাকে দূরে রেখে পিঠ সোজা করে সিজদাহ করবে।
তাশাহ্‌হুদেও সেইরুপ বসবে, যেরুপ পুরুষরা বসে। উম্মে দারদা (রাঃ) তাঁর নামাযে পুরুষের মতই বসতেন।
আর তিনি একজন ফকীহ্‌ ছিলেন।
(আত্‌-তারীখুস স্বাগীর, বুখারী ৯৫পৃ:, বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৩৫৫)
আর মহিলাদের জড়সড় হয়ে সিজদাহ করার ব্যাপারে কোন হাদীস সহীহ নয়। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ২৬৫২ নং) এ জন্যই ইবরাহীম নাখয়ী (রহঃ) বলেন, ‘নামাযে মহিলা ঐরুপই করবে, যেরুপ পুরুষ করে থাকে।’
(ইবনে আবী শাইবা, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৮৯পৃ:)
পক্ষান্তরে দলীলের ভিত্তিতেই নামাযের কিছু ব্যাপারে মহিলারা পুরুষদের থেকে ভিন্নরুপ আমল করে থাকে। যেমন:-
★১। বেগানা পুরুষ আশে-পাশে থাকলে (জেহরী নামাযে) মহিলা সশব্দে কুরআন পড়বে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩০৪) যেমন সে পূর্ণাঙ্গ পর্দার সাথে নামায পড়বে। তাছাড়া একাকিনী হলেও তার লেবাসে বিভিন্ন পার্থক্য আছে।
★২। মহিলা মহিলাদের ইমামতি করলে পুরুষদের মত সামনে না দাঁড়িয়ে কাতারের মাঝে দাঁড়াবে।
★৩। ইমামের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে মহিলা পুরুষের মত ‘সুবহা-নাল্লাহ্‌’ না বলে হাততালি দেবে।
★৪। মহিলা মাথার চুল বেঁধে নামায পড়তে পারে, কিন্তু (লম্বা চুল হলে) পুরুষ তা পারে না।
এ সব ব্যাপারে দলীলসহ্‌ বিস্তারিত আলোচনা যথাস্থানে দ্রষ্টব্য।
অনেক মহিলা আছে, যারা মসজিদে বা বাড়িতে পুরুষদের নামায পড়া না হলে নামায পড়ে না।
এটা ভুল। আযান হলে বা নামাযের সময় হলে আওয়াল অক্তে নামায পড়া মহিলারও কর্তব্য।
(মুত্বাসা ১৮৮-১৮৯পৃ:)

কুরআন


আসলে এ কুরআন এমন পথ দেখায় যা একেবারেই সোজা। যারা একে নিয়ে ভাল কাজ করতে থাকে তাদেরকে সে সুখবর দেয় এ মর্মে যে, তাদের জন্য বিরাট প্রতিদান রয়েছে।
বনী ইসরাঈল, আয়াত ৯
যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না।
বনী ইসরাঈল, আয়াত ১৫
যে কেউ আশু লাভের। আকাঙ্ক্ষা করে, তাকে আমি এখানেই যাকিছু দিতে চাই দিয়ে দেই, তারপর তার ভাগে জাহান্নাম লিখে দেই, যার উত্তাপ সে ভুগবে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে।
বনী ইসরাঈল, আয়াত ১৮
তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ
(১) তোমরা কারোর ইবাদাত করো না, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো।
(২) পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো৷ যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ্‌” পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো।
আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।
বনী ইসরাঈল, আয়াত ২৩-২৪
আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও।
বনী ইসরাঈল, আয়াত ২৬
বাজে খরচ করো না। যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ।
বনী ইসরাঈল, আয়াত ২৭

ইসলাম এর দাওয়াত



ইসলাম এর দাওয়াত দিতে গেলে যারা বলে থাকে ''আমাকে জ্ঞেন না দিয়ে আপনি নিজের চরকায় তেল দিন' অথবা বলে থাকে 'কুরআন হাদিস আমিও কম বুঝিনা সুতরাং 'আপনি আপনার মেশিনে তেল দিন ।' অন্যদের ব্যাপারে নাক গলাবেন না। তাদের উদ্দেশে একটু বলতে চাইঃ
- একিজন মুসলিম আরেকজন মুসলিম এর ভাইবোন। একজন মানুষ যখন কুরআন সুন্নার সত্যিকার জ্ঞেন অর্জন করতে পারবে তখন সে অবশ্যই চাইবে বাকি সব মুসলিম ভাইবোন ও অমুসলিমদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে। সুতরাং এক্ষেত্রে একজন মুসলিম হয়ে এমন বিরক্ত হওয়া মোটেও উচিৎ নয়। দুনিয়াতে কেউ চিরদীন বেঁচে থাকবেনা। বিচার একদিন হবেই ইনশাআল্লাহ্‌। আপনি যদি বলেন আপনি কুরআন হাদিস বুঝেন তাহলে নামায পরেননা কেন ৫ অয়াক্ত ? আপনি কি জানেন না রাসুল (সঃ) বলেছেন 'একজন মুমিন আর সিরক কুফরির মদ্ধে পার্থক্য হচ্ছে সালাত (নামায) !' তিনি আরও বলেছেন 'যে সালাত আদায় করবে সে মুসলিম আর যে সালাত আদায় করবেনা সে কাফের'। তাহলে আপনি কেন নামায পরেন না ? আপনি কি জানেন না আল্লাহ কুরআন এ সব প্রকার নেশাদার দ্রব্ব হারাম করেছেন ? তাহলে মদ,সিগারেট আর অন্যান্য নেশা কিভাবে খাচ্ছেন ? আপনি কি জানেন না কুরআন মাজিদে আল্লাহ নারীদের বলেছেন পর্দা করতে ? আর পর্দার বিধি বিধান রাসুল (সঃ) এর হাদিসে বিস্তারিত থাকা সত্তেও আপনি কিভাবে মডেল হয়ে বেপর্দা হয়ে ডিজিটাল ভাবে ঘুরছেন ? আপনার ইমান থাকলে আর কুয়ারন হাদিসের জ্ঞেন থাকলে তো আপনাকে এই বিষয়ে বলা লাগতনা যেহেতু আপনি সবই জানেন।
যারা বলে থাকে 'আপনি নিজের চরকায় তেল দিন !' তাদের বলতে চাই, আমি তো নিচের চরকায় ই তেল দিচ্ছি। কারন প্রত্যেক মুসলিম এর উপর আল্লাহ ইসলাম এর দাওয়াত পৌঁছে দেয়া ফরয করেছেন। উধাহরন স্বরূপ বলা যায়ঃ আপনি পিকনিকে গেলেন আপনার পরিবার নিয়ে একটা পাহাড়ি এলাকায়। আর সেকানে আপনার চোখের আড়ালে আপনার ছোটো বাচ্চাটি পাহাড়ের ঠিক শেষ মাথায় চলে গেল। আপনি দূর থেকে দেখে জোরে জোরে ডাকছেন কিন্তু বাচ্চা শুনতে পাচ্ছেনা আপনার চিৎকার। কিন্তু আপনি দেখছেন সেখানে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে অথচ আপনার বাচ্চাকে বাঁচাতে এগিয়ে জাচ্ছেনা। আর এক সময় বাচ্চাটা পাহার থেকে পড়ে মারা গেল। তখন আপনি ঐ লোকটাকে জিজ্ঞাস করলেন, আপনি আমার বাচ্চাটাকে একটু হাত বাড়ালেই তো বাঁচাতে পারতেন। তখন লোকটা যদি বলে 'আমি কেন বাঁচাব ! আমি আমার নিজের চরকায় তেল দিচ্ছিলাম।' বলুনতো তখন আপনার কেমন লাগবে ?
- জাহান্নামের আগুন তার চেয়ে ভয়ানক। বিচারের মাঠে মুসলিম অমুসলিম সবাই আল্লাহ্‌র কাছে বিচার দিবে কেন তার কাছে দাওয়াত দেয়া হলনা। আর তখন মুসলিমদের এর জবাব দিতে হবে যদি তারা নিজেরাই আমল করে আর মানুষকে দাওয়াত না দেয়। আশা করি বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিন আর সঠিক বুঝার জ্ঞেন দান করুন। আমীন !

Saturday, July 25, 2015

বোরকা অন্যান্য ধর্মের নারীরাও পড়ে, কিন্তু এজন্য কেউ তাদের টেরোরিস্ট বলে না.....

বোরকা অন্যান্য ধর্মের নারীরাও পড়ে, কিন্তু এজন্য কেউ তাদের টেরোরিস্ট বলে না.....
সত্য ও সুন্দর পথ চলার দিশারী  ইসলাম's photo.

Thursday, July 23, 2015

বিয়ে


২০০৮ সালের কথা। বান্দরবানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এক রিকশাওয়ালার সাথে কথা প্রসঙ্গে সে জানাল সে বিয়ে করেনি, কিন্তু বিয়ে করলে যা মজা পাওয়া যায় সে পেয়েছে।

১৯৬০ সালের দিকে ২০ বছর বয়সী ৬৮ শতাংশ অ্যামেরিকান বিবাহিত ছিল। সমবিবাহ না, আসল বিয়ে। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ২৬ শতাংশ। এখন কত কে জানে।

উপাত্তটা জরুরী। রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমরা ইহুদি খ্রিষ্টানদের অনুসরণ করব প্রতিপদে। সমাজের উপরের দিকে লোকেরা যে বেলেল্লাপনা অনেক আগে করত সেটা সমাজের সাধারণ মানুষেরাও ধরে ফেলেছে। কলগার্ল না হলেও হস্তমৈথুন তো খুব সাধারণ অভ্যাস।

এতে বিয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কীভাবে? বিয়ে দিল্লিকা লাড্ডুর মতো। মজাও আছে, প্যাড়াও আছে। আরেকটা মানুষের সাথে ২৪/৭ মিলিয়ে চলার প্যাড়া। যদি প্যাড়া ছাড়াই মজাগুলোর ব্যবস্থা হয়ে যায় কোন পাগলে বিয়ে করবে?

শুধু মুসলিমরা। কারণ মুসলিমদের কাছে বিয়ে একটা ইবাদাত। নিজেকে পবিত্র রাখার। ভবিষ্যতে আরো মুসলিম পৃথিবীতে এনে পৃথিবী আবাদ করার। মুসলিমরা তাই কুত্তার বাচ্চা পালে না। ক্যারিয়ারকে ঠিক রেখে তার ফাঁক-ফোকরে সন্তান নেয় না। পরিবার ঠিক রাখে-সন্তান জন্ম দেওয়া, ভরণ-পোষণ, লালন-পালন ঠিক রাখে। তার বিশ্বাস ক্যারিয়ার তথা রিযক আল্লাহর কাছ থেকে আসে।

ইসলামের প্রতেকটা জিনিসের মতো বিয়েতেও আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি দুনিয়াতে ভালাই আছে। ব্যাচেলর বাঁচে শুয়োরের মতো, মরে কুকুরের মতো। তরুণ বয়সের বন্ধুরা মধ্যবয়সে হারিয়ে যায়। যে বুড়ো বা বুড়ি সারাজীবন টাকা কামাই করেছে তার টাকার লোভে কেউ তাকে সংগ দেবে না। লোভী মানুষেরা দরকার হলে মেরে টাকাটা নিয়ে নেবে।

বয়সকালে সংগ আসলে দেয় পরিবার। স্ত্রী বা স্বামী। সন্তান। তস্য সন্তান। অবশ্যই সবকিছুতে ইসলাম শর্ত। নয়ত গন্তব্য বৃদ্ধাশ্রম।

ওপেন সেক্সের এ যুগে দেহের ক্ষুধা মেটানো খুবই সহজ। এ যুগে পরিবারের ভাঙন খুব সহজ। আমার ভালো লাগল না--ধরলাম নিজের পথ। মানিয়ে চলা হারিয়ে গেছে। নুহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্ত্রীকে ৯৫০ বছর দাওয়াত দিয়েছিলেন, তালাক দেননি। ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া আল্লাহর কাছে বলেছিলেন জান্নাতে একটা ঘর বানিয়ে দেওয়ার জন্য। শয়তানসম স্বামীকে তিনি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেননি।

আপনার স্বামী কী ফিরাউনের চেয়েও জালিম? আপনার স্ত্রী কী নুহের স্ত্রীর চেয়েও খারাপ? শয়তান এত সহজে আপনার পরিবার ভাঙে কী করে? আপনার সংগীর যদি না পোষায় তাকে আপনি চলে যেতে বললেন, আপনার বুড়ো বয়সের কথা ভাবলেন না? হারাম থেকে কীভাবে বাঁচবেন ভাবলেন না? আপনাকে আপনার বাবা-মা পৃথিবীতে এনেছেন, বড় করেছেন। আপনারও উচিত পৃথিবীতে অন্তত একজনকে রেখে যাওয়া। ঘর ভাঙলে সন্তান আসবে কীভাবে? থাকবে কোথায়?

আপনার স্ত্রী বা স্বামীর ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করুন। সমাজকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করুন। মুত্তাকী হওয়াটা খুব জরুরী। যে আল্লাহকে ভয় করে না আল্লাহ তার ইবাদাত কবুল করেন না। নিকাব বা দাঁড়ি, ইসলামি ফেসবুকিং--কোনো কিছু দিয়েই কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে পার পাবেন না।

সাধু সাবধান।

Collected from: Sharif Abu Hayat Opu vai.

Tuesday, July 21, 2015

ঘুমানোর সময় বলবে....

ঘুমানোর সময় ডান কাতে শুয়ে বলবে, ﺑِﺎﺳْﻤِﻚَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ
ﺃَﻣُﻮْﺕُ ﻭَﺃَﺣْﻴَﺎ 

‘বিসমিকাল্লা-হুম্মা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া’ 
(হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি মরি ও বাঁচি’। অর্থাৎ তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনরায় জাগ্রত হব)।

ঘুম থেকে ওঠার সময় বলবে,
ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ِﻟﻠﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﺃَﺣْﻴَﺎﻧَﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﻣَﺎ ﺃَﻣَﺎﺗَﻨَﺎ
ﻭَﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨُّﺸُﻮْﺭُ

 আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আহইয়া-না বা‘দা মা আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর’ 
(সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দানের পর জীবিত করলেন এবং ক্বিয়ামতের দিন তাঁর দিকেই হবে আমাদের পুনরুত্থান)।

বুখারী হা/৬৩১৫, ৬৩২৪;
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/২৩৮২, ২৩৮৪,
‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯,
অনুচ্ছেদ-৬।

Monday, July 20, 2015

ভাল মৃত্যুর উপায়

             :::::::::: ভাল মৃত্যুর উপায় ::::::::::
প্রশ্ন: ভালো মৃত্যুর কোন আলামত আছে কি?
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক:
হুসনুল খাতিমা বা ভাল মৃত্যু...
ভাল মৃত্যু মানে- মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ হতে বিরত থাকতে পারা, পাপ হতে তওবা করতে পারা, নেকীর কাজ ও ভাল কাজ বেশি বেশি করার তাওফিক পাওয়া এবং এ অবস্থায় মৃত্যু হওয়া। এই মর্মে আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে সহিহ হাদিসে এসেছে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
“আল্লাহ যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন তাকে (ভাল) কাজে লাগান।” সাহাবায়ে কেরাম বললেন: কিভাবে আল্লাহ বান্দাকে (ভাল) কাজে লাগান? তিনি বলেন: “মৃত্যুর পূর্বে তাকে ভাল কাজ করার তাওফিক দেন।” [মুসনাদে আহমাদ (১১৬২৫), তিরমিযি (২১৪২), আলবানি ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন (১৩৩৪)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আল্লাহ তাআলা যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন সে বান্দাকে ‘আসাল’ করেন। সাহাবায়ে কেরাম বলেন: আসাল কি? তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিশেষ একটি ভাল কাজ করার তাওফিক দেন এবং এই আমলের উপর তার মৃত্যু ঘটান।[সহিহ আহমাদ (১৭৩৩০), আলবানি সিলসিলা সহিহা গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ ঘোষণা করেছেন (১১১৪)।
ভাল মৃত্যুর বেশ কিছু আলামত আছে। এর মধ্যে কোন কোন আলামত শুধু মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারে এবং কোন কোন আলামত অন্যান্য মানুষও জানতে পারে।
দুই:
মৃত্যুকালে বান্দার নিকট তার ভাল মৃত্যুর যে আলামত প্রকাশ পায় সেটা হচ্ছে- বান্দাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়। এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় পেও না, চিন্তিত হইও না এবং তোমরা প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর।”[সূরা ফুসসিলত, আয়াত: ৩০]
মৃত্যুকালে মুমিন বান্দাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়া হয়। দেখুন: তাফসিরে সাদী, পৃষ্ঠা- ১২৫৬।
এই মর্মে সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে এসেছে- যা আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে ভালবাসে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে ভালবাসেন। যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর সাক্ষাত প্রিয়, আল্লাহর নিকটও তার সাক্ষাত প্রিয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি কি মৃত্যুর কথা বুঝাতে চাচ্ছেন? আমরা তো সবাই মৃত্যুকে অপছন্দ করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: না, সেটা না। মুমিন বান্দাকে যখন আল্লাহর রহমত, তাঁর সন্তুষ্টি, তাঁর জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করাকে ভালবাসেন। আর কাফের বান্দাকে যখন আল্লাহর শাস্তি, তাঁর অসন্তুষ্টির সংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন।”
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: “হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যখন মানুষের মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হয়ে যায়, যে অবস্থায় আর তওবা কবুল হয় না, সে অবস্থার পছন্দ-অপছন্দকে এখানে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে পড়ে, তার পরিণতি কী হতে যাচ্ছে সেটা তার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।
• ভাল মৃত্যুর আলামত অনেক। আলেমগণ কুরআন-হাদিস খুঁজে এই আলামতগুলো বের করার চেষ্টা করেছেন। এই আলামতগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. মৃত্যুর সময় ‘কালেমা’ পাঠ করতে পারা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তির সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” [সুনানে আবু দাউদ, ৩১১৬], সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (২৬৭৩) আলবানি এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।
২. মৃত্যুর সময় কপালে ঘাম বের হওয়া।
বুরাইদা বিন হাছিব (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:
“মুমিন কপালের ঘাম নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।”[মুসনাদে আহমাদ (২২৫১৩), জামে তিরমিযি (৯৮০), সুনানে নাসায়ি (১৮২৮) এবং আলবানি সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
৩. জুমার রাতে বা দিনে মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:
“যে ব্যক্তি জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করেন আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে নাজাত দেন।”[মুসনাদে আহমাদ (৬৫৪৬), জামে তিরমিযি (১০৭৪), আলবানি বলেছেন: সনদের সবগুলো ধারা মিলালে হাদিসটি সহিহ]
৪. আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী:
“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়,তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১]
এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে নিহত হয় সে শহিদ এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে মারা যায় সেও শহিদ।”[সহিহ মুসলিম, ১৯১৫]
৫. প্লেগ রোগে মারা যাওয়া।
দলীল হচ্ছে নবী আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:
“প্লেগ রোগে মৃত্যু প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য শাহাদাত।”[সহিহ বুখারী (২৮৩০) ও সহিহ মুসলিম (১৯১৬)]
এবং
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি তখন তিনি আমাকে জানান যে, “এটি হচ্ছে- আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব। আল্লাহ যাদেরকে শাস্তি দিতে চান তাদের উপর এই রোগ নাযিল করেন। আর আল্লাহ এই রোগ মুমিনদের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। যে মুমিন প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ এলাকাতে অবস্থান করবে, ধৈর্যধারণ করবে, সওয়াবের প্রত্যাশা করবে এবং এই একীন রাখবে যে, আল্লাহ তার জন্য যা লিখে রেখেছেন সেটাই ঘটবে সে ব্যক্তি শহিদের সমান সওয়াব পাবে।” [সহিহ বুখারি (৩৪৭৪)]
৬. যে কোন পেটের পীড়াতে মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:
“যে ব্যক্তি পেটের পীড়াতে মৃত্যুবরণ করবে সে শহিদ।” [সহিহ মুসলিম (১৯১৫)]
৭. কোন কিছু ধ্বসে পড়ে অথবা পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:
“পাঁচ ধরনের মৃত্যু শাহাদাত হিসেবে গণ্য। প্লেগ রোগে মৃত্যু, পেটের পীড়ায় মৃত্যু, পানি ডুবে মৃত্যু, কোন কিছু ধ্বসে পড়ে মৃত্যু এবং আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হওয়া।” [সহিহ বুখারি (২৮২৯) ও সহিহ মুসলিম (১৯১৫)]
৮. প্রসবউত্তর প্রসূতির মৃত্যু অথবা গর্ভবতী অবস্থায় নারীর মৃত্যু।
এর দলিল হচ্ছে আবু দাউদ (৩১১১) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে নারী জুমা (বাচ্চা) নিয়ে মারা যায় তিনি শহিদ।”।
ইমাম খাত্তাবি বলেন: এ হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যে নারী পেটে বাচ্চা নিয়ে মারা যায়।[আওনুল মাবুদ]
ইমাম আহমাদ উবাদা বিন সামেত (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শহিদের শ্রেণীগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন:
“যে নারী তার গর্ভস্থিত সন্তানের কারণে মারা যায় তিনি শহিদ। সে নারীকে তার সন্তান সুরার (নাভিরজ্জু) ধরে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে।”[আলবানি ‘জানায়িয’ গ্রন্থে (৩৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
সুররা (নাভি): নবজাতকের জন্মের পর ধাত্রী নাড়ী কাটেন এবং সামান্য কিছু অংশ রেখে দেন। যে অংশটুকু রেখে দেন সেটাকে সুররা বা নাভি বলে। আর যে অংশটুকু কেটে ফেলেন সেটাকে সুরার (নাভিরজ্জু) বলা হয়।
৯. আগুনে পুড়ে, প্লুরিসি (ফুসফুসের আবরক ঝিল্লির প্রদাহজনিত রোগবিশেষ) এবং যক্ষ্মা রোগে মৃত্যু।
দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আল্লাহর রাহে নিহত হওয়া শাহাদাত, প্লেগ রোগে মারা যাওয়া শাহাদাত, পানি ডুবে মারা যাওয়া শাহাদাত, পেটের পীড়ায় মারা যাওয়া শাহাদাত, সন্তান প্রবসের পর মারা গেলে নবজাতক তার মাকে নাভিরজ্জু ধরে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (সংকলক বলেন, এই হাদিসের জনৈক বর্ণনাকারী বায়তুল মোকাদ্দাসের খাদেম আবুল আওয়াম হাদিসটির অংশ হিসেবে “আগুনে পুড়ে মৃত্যু ও যক্ষ্মা রোগ” এর কথাও বর্ণনা করেছেন।) আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান-সহিহ।[সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব (১৩৯৬)]
১০. নিজের ধর্ম, সম্পদ ও জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:
“যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা গিয়ে মারা যায় সে শহিদ। যে ব্যক্তি তার ধর্ম (ইসলাম) রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহিদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহিদ।”[জামে তিরমিযি (১৪২১)]
সহিহ বুখারি (২৪৮০) ও সহিহ মুসলিমে (১৪১) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন: আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
“যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহিদ।”
১১. আল্লাহর রাস্তায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে ব্যক্তি মারা যায় সেও শহিদ।
দলিল হচ্ছে সহিহ মুসলিমের হাদিস (১৯১৩): সালমান আলফারেসি (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“একদিন, একরাত পাহারা দেয়া একমাস দিনে রোজা রাখা ও রাতে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর যদি পাহারারত অবস্থায় সে ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার জীবদ্দশায় সে যে আমলগুলো করত সেগুলোর সওয়াব তার জন্য চলমান থাকবে, তার রিযিকও চলমান থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকে সে মুক্ত থাকবে।”
১২. ভাল মৃত্যুর আরো একটি আলামত হলো- নেক আমলরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি কোন একটি সদকা করল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসনাদে আহমাদ (২২৮১৩), আলবানি জানায়িয গ্রন্থে পৃষ্ঠা-৪৩ এ হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন। দেখুন কিতাবুল জানায়িয, পৃষ্ঠা- ৩৪।
এই আলামতগুলো ব্যক্তির ভাল মৃত্যুর সুসংবাদ দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তির ব্যাপারে এ নিশ্চয়তা দিব না যে, তিনি জান্নাতি। শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন তারা ছাড়া। যেমন চার খলিফার ব্যাপারে তিনি নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ভাল মৃত্যু দান করুন।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি আমল

গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি আমল
১- ইসলামের রুকুন সমূহের হিফাযত বা সংরক্ষণ করা ।(বুখারী/মুসলিম)
২- কাজ,কর্ম ও কথা বার্তায় সত্যবাদী হওয়া।(বুখারী/মুসলিম)
৩- আল্লাহর রাস্তায় হালাল উপার্জন হতে খরচ করা ।(বুখারী/মসলিম)
৪- ব্যাপক আকারে সালামের প্রচলন করা।(তিরমিযী হা:নং২৪৮৫,ইবনে মাজাহ হা:নং ১৩৩৪)

৫- মাসজিদ নির্মাণ করা।(বুখারী হা:নং৪৫০,মুসলিম হা:নং৫৩৩)
৬- ইয়াতিম,অনাথ বাচ্চাদের প্রতিপালন করা।(মুসলিম হা:নং ২৯৮৩)
৭- আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা।(বুখারী/মুসলিম)
৮- সৎচরিত্রের অধিকারী হওয়া।(তিরমিযী হা:নং ২০০৪)
৯- ফযর ও আসর নামায জামাআতের সাথে আদায়ের ব্যাপারে যত্মশীল হওয়া।(মুসলিম হা:নং৬৩৫)
১০- নফল ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামায গুলোর বেশীবেশী হিফাযাত করা।(মুসলিম হা:নং ৭২৮)
১১-নামায পড়ার জন্য পায়ে হেঁটে বেশী বেশী মাসজিদে গমন করা।(বুখারী হা:নং৬৬২,মুসলিম হা:নং ৬৬৯)
১২-কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে অপসারণ করা বা দুরে সরানো।(মুসলিম হা:নং ১৯১৪)
১৩-অসুস্হ্য রোগীদের কে যিয়ারাত বা পরিদর্শন করতে যাওয়া।(মুসলিম হা:নং ২৫৬৮)
১৪-রাগ বা ক্রোধ দমন ও সংবরণ করা।( সাহীহুল জা‘মে হা:নং ৭৩৭৪)
১৫-মছিবতের সময় ধর্য্য ধারণ করা।(বুখারী ৫৬৫২)
১৬- কবুল হাজ্জ ।(বুখারী হা:নং ১৭৭৩,মুসলিম হা:নং ১৩৪৯)
১৭-বেশীবেশী সাদকাহ তথা দান খায়রাত করা।(মুসনাদে আহমাদ ৩৯১/৫)
১৮-মুখমন্ডল ও যৌনাংগের হিফাযাত করা।(বুখারী ৬৪৭৪)
১৯- ফরজ নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করা।(নাসায়ী/ফি আমালিল ইয়াম ওয়াল লাইল,১৮২পৃ:হা:১০০)
২০-সুরা ইখলাস পাঠ করা।(মুয়াত্তা ১/২০৭-তিরমিযী ৮৯৭)
২১-রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়া।(তিরমিযী-২৪৮৫)
২২-হিংসা বিদ্বেষ করা থেকে হৃদয় মন কে পবিত্র করা।(মুসনাদে আহমাদ ৩/১৬৬)
২৩-স্ত্রী স‌্বামীর আনুগত্য করা।(সহীহ ইবনে হিববান ১২৯৬,মুসনাদে আহমাদ ১/১৯১)
২৪-আল্লাহ তা’য়ালার নাম সমূহ অর্থসহ মুখস্ত করা।(বুখারী/ মুসলিম)
২৫-আল হায়া তথা লজ্জাশীলতা বজায় রাখা।(তিরমিযী হা:নং২০০৯)
২৬-আল্লাহ তা’য়ালার সন্তষ্টির জন্য জ্ঞানার্জন করা।(মুসলিম ২৬৯৯)
২৭-পিতা মাতার সহিত সদাচারণ করা।(আত তাবরানী ফিল মু‘জামিল কাবীর ২২০২)
২৮-আল্লাহর একত্ববাদে বিশ‌্বাসী হওয়া।(মুসলিম)
২৯-ওয়াক্ত অনুযায়ী ফরজ নামায আদায় করা।(মুসলিম)
৩০-আল্লাহর পথে জিহাদ করা।(বুখারী ২৮১৮,মুসলিম ১৭৪২

হে মুসলিম মিল্লাত!আসুন জান্নাতের মত অনন্য সুখের নিবাস গড়ি। জান্নাতের প্রত্যাশী হয়ে উপরোক্ত আমাল গুলি
করি। প্রভুর নিকট প্রার্থনা করি এবং দু‘আয় বলি,আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলুকাল জান্নাতুল ফিরদাউসি ওয়ামা ইউ
কাররাবু ইলায়হি মিন কাউলিন ওয়া আমালিন। আমীন।

বিদ’আত বা দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন নিষিদ্ধ অধ্যায়


عن عائشة، رضي الله عنها، قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد" (( متفق عليه)).
وفي رواية لمسلم : "من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد".
--------------------------------------------------------------------------------
বিদ’আত বা দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন নিষিদ্ধ অধ্যায় ::
রিয়াযুস স্ব-লিহীন :: বই ১ :: হাদিস ১৬৯
হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; কোনো ব্যক্তি যদি আমাদের এই দ্বীনের ভেতর এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ও মুসলিম)
عَنْ أَبِي نَجِيحٍ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: "وَعَظَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم مَوْعِظَةً وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! كَأَنَّهَا مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأَوْصِنَا، قَالَ: أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ تَأَمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ؛ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ".
رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ [رقم:4607]، وَاَلتِّرْمِذِيُّ [رقم:266] وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
--------------------------------------------------------------------------------
ইমাম নওবীর ৪০ হাদিস
হাদিস ২৮
আবূ নাজীহ্ আল-'ইরবাদ ইবন সারিয়াহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বক্তৃতায় আমাদের উপদেশ দান করেন যাতে আমাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে ও আমাদের চোখে পানি এসে যায়।
আমরা নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে বিদায়কালীন উপদেশ; আপনি আমাদেরকে অসীয়াত করুন। তিনি বললেন: "আমি তোমাদের মহান আল্লাহকে ভয় করতে অসীয়াত করছি, আর আনুগত্য দেখাতে অসীয়াত করছি; যদি কোন গোলামও তোমাদের শাসক হয় তবুও। তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখবে; সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের পদ্ধতি মেনে চল, তা দাঁত দিয়ে (অর্থাৎ খুব শক্তভাবে) ধরে রাখ; আর অভিনব বিষয় সম্পর্কে সাবধান থাক, কারণ প্রত্যেক অভিনব বিষয় হচ্ছে বিদ'আত, প্রত্যেক বিদ'আত হচ্ছে গোমরাহী এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামের আগুন।"
[-আবূ দাউদ(৪৬০৭) ও তিরমিযী(২৬৬) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এটা সহীহ্ (হাসান) হাদীস।]
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا ثَوْرُ بْنُ يَزِيدَ، قَالَ حَدَّثَنِي خَالِدُ بْنُ مَعْدَانَ، قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَمْرٍو السُّلَمِيُّ، وَحُجْرُ بْنُ حُجْرٍ، قَالاَ أَتَيْنَا الْعِرْبَاضَ بْنَ سَارِيَةَ وَهُوَ مِمَّنْ نَزَلَ فِيهِ { وَلاَ عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لاَ أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ } فَسَلَّمْنَا وَقُلْنَا أَتَيْنَاكَ زَائِرِينَ وَعَائِدِينَ وَمُقْتَبِسِينَ . فَقَالَ الْعِرْبَاضُ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا فَقَالَ " أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ " .
--------------------------------------------------------------------------------
সুনান আবু দাউদ :: কিতাব আস-সুন্নাহ অধ্যায় ৪২
হাদিস ৪৬০৭
আহমদ ইবন হাম্বল (র).... হাজার ইবন হাজার (র) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ একদা আমরা ইরবায ইবন সারিয়া (রা)-এর নিকট গমন করি, যার শানে এ আয়াত নাযিল হয়ঃ তাদের জন্য কোন অসুবিধা নেই, যারা আপনার নিকট এ জন্য আসে যে, আপনি তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করবেন । আপনি বলেনঃ আমি তো তোমাদের জন্য কোন বাহন পাই না ।
রাবী বলেনঃ আমরা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম করি এবং বলিঃ আমরা আপনাকে দেখার জন্য, আপনার খিদ্মতের জন্য এবং আপনার কাছ থেকে কিছু সংগ্রহের জন্য এসেছি । তখন তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের সঙ্গে সালাত আদায়ের পর, আমাদের দিকে ফিরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন, যাতে আমাদের চোখ অশ্রু ভারাক্রান্ত হয় এবং অন্তর ভীত-সন্ত্রস্থ হয় । আমাদের মধ্যে একজন বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা) ! মনে হচ্ছে এ আপনার বিদায়ী ভাষণ, কাজেই আপনি আমাদের আরো কিছু অছীয়ত করুন । তখন তিনি (সা) বলেনঃ আমি তোমাদের তাকওয়া অবলম্বনের জন্য বলছি এবং শোনা ও মানার জন্যও, যদিও তোমাদের আমীর হাবশী গোলাম হয় । কেননা, তোমাদের মাঝে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা বহু মতভেদ দেখতে পাবে । এমতাবস্থায় তোমাদের উচিত হবে আমার ও আমার খুলাফায়ে-রাশেদার সুন্নাতের অনুসরণ করা, যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী । তোমরা তাদের দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করবে । তোমরা বিদ'আতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা হতে দূরে থাকবে । কেননা, প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ'আত এবং প্রত্যেক বিদ'আতই গুমরাহী ।

Wednesday, July 15, 2015

কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?

কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন যে, কিয়ামত এর পূর্বে ৩০ এর মত মিথ্যুক লোক নবুওয়াতের দাবী করবে, তাঁর সে ভবিষ্যদ্বাণীর প্রমাণ আমরা দেখতে পাই গোলাম আহম্মেদ কাদিয়ানীর নবুওয়াতের দাবীর মাঝ দিয়ে। আমাদের দেশের আলেমগণ অনেক আগ থেকেই বিভিন্ন ভাবে তার দাবীর অবৈধতা প্রমাণ করেছিলেন, এবং এক সময় আলেমরা সবাই তার বিরুদ্ধে এজমা, বা ঐক্যমত পোষণ করে অমুসলিম ভন্ড নবুওয়াতের দাবীদার বলে তার ফেৎনা কে সাময়িক ভাবে রুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অনেকে তার সাথে বিতর্কে গিয়েছিলেন এবং তাকে বিতর্কেও হারিয়েছিলেন, মনে পড়ে কাজী দানভিল্লা অমৃতসরী সাহেবের সাথে তার তর্কের কথা, ভন্ড তার নবুওয়াতের সমর্থনে দলীল হিসাবে কুরআনে করিমের সূরায় ছফ-এর() শদ্ব দ্বারা দলীল নিলে কাজী সাহেব বললেন তোমার নাম তো গোলাম আহমদ এখানে বলা হয়েছে আহমদ, অর্থাৎ তুমি আহমদের গোলাম, আহমদ নও, তখন সে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ভাবে আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে নামের প্রথম অংশ যেখানে উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ তা ত্যাগ করে বলে উঠল, আমার নামের শেষাংশই নয়,
কাজী সাহেব দেখলেন তার সাথে তর্কে যাওয়া বৃথা, কারণ সে গোড়ামী করে কুরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করার পরও প্রমাণ হাজির করতে না পেয়ে আরবী ভাষার ব্যাকরণের বিপরীতে গিয়ে তার নামের দ্বিতীয়াংশ আহমদ কেই প্রকৃত নাম বলে সাব্যস্ত করতে যাচ্ছে, তখন তিনি সম্পূর্ণ তর্কের খাতিরে বললেন, যদি নামের শেষাংশই উদ্দেশ্য হয় তবে আমার নাম সানাউল্লাহ, আমার নামের শেষাংশ আল্লাহ, তা হলে আমি তোমার আল্লাহ হয়ে তোমার মত খবিসকে কক্ষনো মানুষের জন্য নবী হিসাবে পাঠাই নি।”
অনুরূপভাবে এক সময় কাদিয়ানী নিজকে মারিয়াম (আ) বলে দাবী করলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মহিলাদের ঋতুস্রাব হয়ে থাকে, তোমার কি তাও হয়?
সে নির্লজ্জের মত বলে উঠল হ্যাঁ অমুক রাত থেকে অমুক রাত পর্যন্ত আমার ঋতুস্রাব ছিল। যেহেতু তার জীবনের সব সময়ই সে বিভিন্ন নতুন নতুন দাবী নিয়ে বের হত, কখনো, ঈসা, আবার কখনো মাহদী, আবার কখনো নবী, আবার কখনো ধর্ম সংস্কারক, আবার কখনো বা সকল ধর্মের বিচারক ইত্যাদি দাবীর থুবড়িতে মুখরিত ছিল, আলেমগণ তাকে মাতাল জ্ঞানে ত্যাগ করাই সমীচিন ছিল, বরং তাকে শরীয়তের কাঠগড়ায় আসামী করে শরীয়তের হুকুম অনুসারে তার ফয়সালা করা জরুরী ছিল কিন্তু তখন ছিল উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ সরকারের রাজত্ব, মূলত তারাই তাকে এগুলো বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তারা তাকে সব রকম সহযোগিতা ও সহানুভূতি দ্বারা সর্বদা রক্ষা করেছে সেহেতু আলেমগণ তার বিরুদ্ধে মোনাজেরা বা বিতর্কে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ পাননি, সে অবশ্য ব্রিটিশ সরকারেরজন্য বিরাট পুরুস্কার ছিল কারণ, সে যখন দাবী করল যে, সে ঈসা (আ) তখন মুসলিমদের হাদীস মতে ঈসা (আ) এর আবির্ভাবের পর আর জিযিয়া কর গ্রহণ করা হবে না এবং জ্বিহাদ এর হুকুমে পরিবর্তন হবে বলা হয়ে থাকে এজন্য সে ইংরেজদের জন্য অতি মূল্যবান পুরস্কার স্বরূপ তাদের বিরুদ্ধে জ্বিহাদ বা আযাদী আন্দোলন কে হারাম ঘোষনা দিয়ে দিল, আর তখনি দিবালোকের মত স্পষ্ট হলো যে, কার হাতের ক্রিড়নক হিসাবে সে এসব কাজ করছিল।
কিন্তু আলেমগণ এতেই নিরস্ত থাকেন নি, বরং তারা তাকে মুবাহালার জন্য ডেকেছিল, সেই মুবাহালা বা পরস্পর আল্লাহর গজবকে আহবান করে মিথ্যাবাদীর
উপর তার পতন কামনা করাই তার জন্য কাল হয়েছিল, কারণ কাজী ছানাউল্লা সাহেবের সাথে মুবাহালায় সে বলেছিল, আমাদের মধ্যে যে মিথ্যুক আল্লাহ যেন তাকে অপরের জীবদ্দশায় নিকৃষ্ট অবস্থায় মৃত্যু দেন। তিনি বলেছিলেন আমীন, আল্লাহ কবুল করুন। অত:পর কাজী সাহেবের মৃত্যুর পূর্বেই গোলাম আহমদ কাদিয়ানী একদা পায়খানায় প্রবেশ করে সেখানেই পড়ে মারা যায়। আর এভাবে আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের শাস্তি দিয়ে থাকেন। তার মৃত্যুর পর কাদিয়ানী আন্দোলন কিছুদিন স্তিমিত থাকলেও পরবর্তীতে তাদের কাজের ধারা দ্বিগুন চতুর্গুণ হারে পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রসার লাভ করতে থাকে, বর্তমানেও তারা ইসলামের নাম ব্যবহার করেই তাদের মতবাদ প্রচার ও প্রসার করে থাকে। সাম্রাজ্যবাদীদের সার্বিক সহায়তায় তারা আমেরিকা ও দক্ষিন আফ্রিকায় তাদের ব্যাপক তৎপরতা দেখাচ্ছে, ইসলামী বিশ্বের আলেমদের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধ শুরু করা। যাতে করে উম্মতকে তাদের ফিতনা থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়। আর সে যুদ্ধে এটি আমার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস। আল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ করছি তিনি আমার এ প্রচেষ্টাকে কবুল ও মঞ্জুর করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
যাকারীয়া
মদীনা শরীফ, ১৪১৩ হি.

Tuesday, July 14, 2015

প্রশ্নঃ ঈদের দিনে কী কী কাজ করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে বা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?

প্রশ্নঃ ঈদের দিনে কী কী কাজ করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে বা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েকঃ
ঈদের দিনে যে সকল কাজ করতে হবে সেগুলো হলোঃ
১) গোসল করতে হবে। আল মুয়াত্তার ৪২৮ নম্বর হাদীসে উল্লেখ আছে যে, “আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) ঈদের সলাতের পূর্বে গোসল করতেন।” সুতরাং ঈদের সলাতের পূর্বে গোসল করা সুন্নাত।
২) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং উত্তম জামা কাপড় পরিধান করা সুন্নাত।
৩) রসূল [ﷺ] ঈদের সলাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় কিছু খেজুর খেতেন। হাদীসে বর্ণিত আছে, “রসূল [ﷺ] ঈদের সলাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে কিছু খেজুর খেতেন।”
(সহীহ আল-বুখারী, অধ্যায় ঈদ, হাদীস ৯৫৩)
৪) ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া উচিত। সহীহ বুখারীতে উল্লেখ আছে যে, “রসূল [ﷺ] ঈদের দিন সলাতের আদায় করার জন্যে ঈদগাহে যেতেন।”
(সহীহ আল-বুখারী, অধ্যায় ঈদ, হাদীস ৯৫৬)
সুতরাং ঈদগাহে সলাতের আদায় করা সুন্নাত অন্যথায় এই সলাত মাসজিদে আদায় করতে হবে।
আরেকটি হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে যে, “রসূলুল্লাহ [ﷺ] বলেছেন, মাসজিদে নববীতে সলাত আদায় করা মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্যান্য যেকোনো মসজিদে সলাত আদায় করার তুলনায় এক হাজার গুণ উত্তম।”
(সহীহ আল-বুখারী, অধ্যায় হারামাইন, হাদীস ১১৯০)
তথাপি তিনি [ﷺ] ঈদের সলাত আদায় করার জন্যে মাসজিদ ত্যাগ করে ঈদগাহে যেতেন।
আরো উল্লেখ আছে যে, “রসূলূল্লাহ [ﷺ] ঈদগাহ থেকে বাড়ী ফেরার পথে ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করতেন অর্থাৎ যাওয়ার সময় এক রাস্তা ব্যবহার করতেন এবং ফিরে আসার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে আসতেন।”
(সহীহ আল-বুখারী অধ্যায় ঈদ, হাদীস ৯৮৬)
৫) সকাল সকাল ঈদের সলাত পড়তে যাওয়া উচিত।
৬) হাদীসে উল্লেখ আছে, “রসূলুল্লাহ [ﷺ] পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতেন।”
(সহীহ আল-বুখারী অধ্যায় ঈদ, হাদীস নং ৯৫৮)
সুতরাং পায়ে হেঁটে যাওয়া সুন্নাত। সিলসিলাহ আস সহিহাহ গ্রন্থের ১৭১ নম্বার হাদীসে উল্লেখ আছে যে, “রসূল [ﷺ] ঈদের দিন বাড়ী হতে বের হয়ে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন।”
“ইবনে মাসউদ (রা.) নিম্নের তাকবীর পাঠ করতেন। তা হলো আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।”
(দার আল কুতনি এবং মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ, হাদীস ৫৬৬০)
সুতরাং আমাদেরও এটা পাঠ করা উচিত। অতএব এগুলোই হলো ঈদের দিনে পালনীয় কর্মসমূহ।

প্রশ্নঃ ঈদের দিন গান, বাদ্য, আনন্দ ফুর্তি ইত্যাদি করা কী অনুমদিত?


প্রশ্নঃ ঈদের দিন গান, বাদ্য, আনন্দ ফুর্তি ইত্যাদি করা কী অনুমদিত?
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েকঃ
ইসলামী শরীয়াতে সীমানার আওতায় এগুলো করার অনুমোদন আছে। বর্ণিত আছে যে, “পূর্বে মদীনাবাসী দুইটি দিনে আনন্দ ফূর্তি উদযাপন করতো এবং আল্লাহ তা‘আলা ঐ দুটি দিনকে পরে দুইটি ঈদ দ্বারা প্রতিস্থাপন করে দিয়েছেন।”
(সুনান আন-নাসাঈ, অধ্যায় ঈদ, হাদীস ১৫৫৭)
ঈদের দিনে গান বাদ্য করার ব্যাপারে হাদীসে উল্লেখ আছে যে, “আয়েশা (রা.) বলেন, “ঈদের দিনে লোকেরা খেলাধূলা করতো এবং গান গাইতো।” অর্থাৎ ঈদের দিনে এগুলো হতে পারে।
(সহীহ আল-বুখারী, অধ্যায় ঈদ, হাদীস ৯৫০)
আরেকটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, “ঈদের দিনে দুটি আনসারি তরুণী গান গাচ্ছিল। এমতাবস্থায় আবূ বাকর (রা.) সেখানে প্রবেশ করলেন এবং বললেন, তোমরা গান গাচ্ছো তাও আবার রসূল [ﷺ]-এর বাড়ীতে? অতঃপর রসূল (সা) বললেন, তাদেরকে গাইতে দাও। কারণ আজ ঈদের দিন।”
(সহীহ আল-বুখারী, অধ্যায় ঈদ, হাদীস ৯৫২)
সুতরাং সীমিত আকারে গান হতে পারে কিন্তু ইন্সট্রুমেন্ট, বাদ্য ইত্যাদি বাজান হারাম এবং ইসলামী সংগীত গাইতে কোনো সমস্যা নেই। রসূলুল্লাহ [ﷺ] বলেছেন, “আজ হলো ঈদের দিন। সুতরাং খাও এবং পান করো।”
(সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ঈদ, হাদীস ২৫৩৯ ও ২৫৪০)
অতএব, সীমিত আকারে গান, আনন্দ-ফূর্তি করা যেতে পারে।

আল্লাহর নবী ﷺ সন্ধ্যাবেলায় এই দো‘আ পড়তেন-আম্‌সাইনা অ আমসাল মুলকু লিল্লা-হ.............

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী ﷺ সন্ধ্যাবেলায় এই দো‘আ পড়তেন,
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى المُلْكُ للهِ، وَالحَمْدُ للهِ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ «لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدير، رَبِّ أَسْألُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الكَسَلِ، وَسُوءِ الكِبَرِ، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ، وَعَذَابٍ فِي القَبْر
‘আম্‌সাইনা অ আমসাল মুলকু লিল্লা-হ, অলহামদু লিল্লা-হ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহ্‌দাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হা্ম্‌দু অহুয়া আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর। রাবিব আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ খাইরা মা বা’দাহা, অ আঊযু বিকা মিন শার্রি মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ শার্রি মা বা’দাহা, রাবিব আঊযু বিকা মিনাল কাসালি অ সূইল কিবার, রাবিব আঊযু বিকা মিন আযা-বিন ফিন্না-রি অ আযা-বিন ফিল ক্বাব্র।’
অর্থাৎ আমরা এবং সারা রাজ্য আল্লাহর জন্য সন্ধ্যায় উপনীত হলাম। আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, (বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে বললেন,) তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই জন্য যাবতীয় স্তুতি, এবং তিনি সকল বস্তুর উপর সর্বশক্তিমান। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট এই রাতে যে কল্যাণ নিহিত আছে তা এবং তার পরেও যে কল্যাণ আছে তাও প্রার্থনা করছি। আর আমি তোমার নিকট এই রাত্রে যে অকল্যাণ আছে তা এবং তারপরেও যে অকল্যাণ আছে তা হতে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার নিকট অলসতা এবং বার্ধক্যের মন্দ হতে পানাহ চাচ্ছি। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের এবং কবরের সকল প্রকার আযাব হতে আশ্রয় চাচ্ছি।
তিনি যখন সকালে উঠতেন তখনও এই দো‘আ পাঠ করতেন; বলতেন
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ المُلْكُ للهِ
‘আস্বাহনা ও আসবাহাল মুলকু লিল্লাহ------।’ রিয়াদুস স্বালেহীন ১৪৬৩। [মুসলিম ২৭২৩]

রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো- অপরকে খাদ্য খাওয়ানো


রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো-
[২৪] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো
রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে, অর্থ: তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। [সূরা আদ-দাহর: ৮] এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১২]।
অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে,‘‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। [বাইহাকী, শু‘আবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান]।

রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো- কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা


রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো-
[২৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা
কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে, ‘‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী’’ -[সূরা আল-হিজর: ৯]। যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম। আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে” -[সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪]।

Monday, July 13, 2015

তাবলীগ জামাত” সম্পর্কে মক্কা-মদীনার আলেমদের ফতোয়া

““তাবলীগ জামাত” সম্পর্কে মক্কা-মদীনার আলেমদের ফতোয়া””
=============================
>> তাবলীগ জামাতের লোকদের ‘আকিদাহ’ ও আমল কেমন?
■ সৌদি আরবের সাবেক ‘গ্র্যান্ড মুফতি’, ইমাম আবদুল আ’যিয ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহর ফতোয়াঃ
তাবলীগ জামাতের অনুসারী লোকেরা আকিদা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখে না, কাজেই তাদের সাথে যাওয়ার অনুমতি নেই। তবে যে ব্যক্তির শরিয়ত সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে এবং আহল সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ‘আকিদাহ’ সম্পর্কে যার সঠিকতা নির্ণয় করার এবং তা বুঝার ক্ষমতা আছে, সেব্যক্তি তাবলিগিদের সাথে যেতে পারবে। কেননা সে (কোন আলেম বা তালিবুল ইলম যদি তাদের সাথে যায় তাহলে) তাবলিগিদেরকে সঠিক পথ দেখাতে পারবে, তাদেরকে সুন্দরভাবে উপদেশ দিতে পারবে এবং ভালো কাজে তাদের সাথে সাহায্যও করতে পারবে কারণ তাবলিগিরাই খুবই কর্মপরায়ণ। কিন্তু তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের আরও অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন এবং ‘তাওহীদ’ ও ‘সুন্নাহ’ সম্পর্কে পথ নির্দেশনা দেবার ক্ষমতা রাখে এমন ব্যক্তিদের দরকার। আল্লাহ ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝার ক্ষমতা দিয়ে আমাদের সবাইকে রহমত দান করুন এবং তা ধরে রাখার কাজে দৃঢ়তা দান করুন। [আমিন]
তথ্য সূত্রঃ মাযমু ফাতাওয়া আল শাইখ ইবন বাযঃ ৮/৩৩১।
=============================
>> তাবলীগ জামাতের সাথে ‘চিল্লা’ দেওয়া যাবে?
■ সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন ও মুফতি, আল্লামাহ শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহর ফাতওয়াঃ
প্রশ্নঃ আল্লাহ আপনার সাথে ভালো আচরণ করুন হে সম্মানিত শায়খ! এটা কি জায়েজ কোথায় বেড়িয়ে পড়া এক মাসের জন্য, এক সপ্তাহের জন্য অথবা একদিনের জন্য যেইভাবে তাবলিগ জামাতের লোকেরা করে থাকে? এটা কি সুন্নত নাকি বিদআ’ত? শরীয়তের জ্ঞান অর্জনে অধ্যায়নরত এমন কারো জন্য এটাকি জায়েজ, এই জামাতের সাথে চিল্লা দেওয়া বা বের হওয়া?
উত্তরঃ এটা জায়েজ নয়, কারণ এটা একটা বিদআ’ত। এভাবে বেড়িয়ে যাওয়া ৪০ দিন, ৪ দিন, ৪ মাস এটা হচ্ছে বিদ'আত। এটা প্রমানিত যে, তাবলিগ জামাআ’ত হচ্ছে ভারতীয় দেওবন্দীদের মধ্য থেকে একটা “সূফী” জামাত। তারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় তাদের “সূফীবাদ” প্রচার করার জন্য। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী ব্যক্তি, তাওহীদের অনুসারী কোন ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, তাবলিগ জামাতের সাথে তাবলীগে বের হবে। কারণ সে যদি তাবলিগিদের সাথে যায়, তাহলে সে তাদেরকে বিদআ’ত প্রচার করতে সাহায্য করলো। এবং লোকেরা তাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করবে। “অমুক (আলেম বা শিক্ষিত লোক) তাদের সাথে তাবলীগে যায়”, অথবা এটা বলবে “সাধারণ মানুষ সবাই আমাদের সাথে যায়” অথবা তারা বলবে “আরে তাবলিগ জামাত এইদেশে (সৌদি আরবে) বৈধ।”. এইজন্য তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব, তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব এবং তাদের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাবেনা (তাদের কথা শোনা যাবেনা)।. এটা এজন্য যে, তাদের কথা না শুনলে বা তাদেরকে কোনভাবে সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তারা তাদের বিদআ’ত তাদের দেশে নিয়ে ফিরে যাবে, আমাদের আরব দেশগুলোর মাঝে ছড়াতে পারবেনা। এছাড়া তাদের সাথে গিয়ে তাদেরকে শিক্ষা দেওয়াও জায়েজ নয়। এটা ভুল, কারণ তারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে চায়না। তারা জ্ঞান অর্জন করতে চায়না কারণ তারা ধোকাবাজ লোক, তাদের বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। তারা এসেছে তোমাদেরকে (সূফীবাদ ও ইলিয়াসি তরীকা) শিক্ষা দেওয়ার জন্য, তারা এজন্য আসেনি যে তোমাদের কাছ থেকে কিছু শিখবে। তারা এসেছে তোমাদেরকে তাদের “সূফীবাদ” ও তাদের “মাযহাব” শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তারা তোমাদের কাছে শিখতে আসেনাই, তারা যদি শিখতে আসতো তাহলে তারা আরব দেশের ওলামাদের সাথে মসজিদে বসতো এবং তাদের কাছ থেকে কিতাব অধ্যায়ন করতো। এসব ভুলের মধ্য থেকে এর দ্বারা ধোকায় পড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নাআ’ম।
তথ্যসূত্রঃ শায়েখের ফতোয়ার ভিডিও দেখুন এই লিংক এ –
https://www.youtube.com/watch?v=RsDXXtYsK_U
=============================
>> তাবলীগ জামাতের ভ্রান্ত আকিদার কারণে তাদেরকে ব্যন করে দেওয়া উচিতঃ
■ সৌদি আরবের সাবেক ‘গ্র্যান্ড মুফতি’, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে-শাইখ রাহিমাহুল্লাহর ফতোয়াঃ
আমি (তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রধান) মহোদয়ের নিকট এই প্রতিবেদন পেশ করছি যে, তাবলিগ জামাতের কোনই ফায়দা নেই, এটা একটা বিদআ’তী এবং পথভ্রষ্ট সংগঠন। তাদের নিসাব গ্রন্থ (ফাযায়েলে আমাল) পড়ে দেখলাম, তাতে গোমরাহী এবং বিদআ’তে ভরপুর। এতে কবর-মাযার পূজা এবং শিরকের দিকে আহবান করা হয়েছে। বিষয়টি এমনই মারাত্মক যে, এই ব্যাপারে চুপ থাকা যায় না। এজন্য আল্লাহ যদি চান, তাহলে অবশ্যই আমি এর প্রতিবাদ লিপি পাঠাব যেন এর বিভ্রান্তি ও বাতিল প্রকাশ হয়ে পড়ে। আল্লাহর নিকট দুআ করি তিনি যেন তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করেন এবং কালিমাকে সুউচ্চে রাখেন। [আমীন]
তারিখঃ ২৯/০১/১৩৮২ হিঃ।
তথ্য সূত্রঃ ফতওয়া ও চিঠিপত্র, শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে শাইখ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৬৭-২৬৮। [সাবেক গ্রান্ড মুফতী, সৌদী আরব তাঁর রাজকীয় তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রধানকে লেখা পত্র]
=============================
শায়খ হামুদ আত-তুওাইজিরি রাহিমাহুল্লাহ তাঁর “কওয়াল আল-বালিগ” নামক কিতাবে বলেছেন,
“তাবলীগীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই হচ্ছে “তাবলীগ ই নিসাব” (ফাযায়েলে আমাল নামেও পরিচিত), যেই বইটি তাদের একজন নেতা লিখেছেন যার নাম মুহাম্মাদ যাকারিয়া কান্দলভী। তারা এই বইটাকে এতটাই গুরুত্ব দেয় যেমনটা আহলুস সুন্নাহ “সহিহাইন” (বুখারী ও মুসলমি) এবং অন্যান্য হাদিসের বইকে গুরুত্ব দেয়। তাবলীগীরা এই বইটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই হিসেবে ভারতীয় এবং অন্যান্য অনারব মানুষের নিকট তুলে দিয়েছে, যারা এই দলটিকে সমর্থন দেয়। এই বইটিতে পরিপূর্ণভাবে রয়েছে শিরক, বিদয়াত, কিচ্ছা-কাহিনী এবং জাল ও দুর্বল হাদিস। আসলে এই বইটি হচ্ছে এমন একটি বই যা মন্দ, পথহারা এবং ফিতনাহ এর সমষ্টি।
=============================
বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ইমাম মুহা’ম্মদ নাসির উদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ্‌, যাকে শায়খ ইবনে বাজ এবং শায়খ মুক্ববইল সহ অন্যান্য ওলামারা বর্তমান যামানার ‘মুজাদ্দিদ’ বলে ফতোয়া দিয়েছেন, তাঁর নিকট প্রশ্ন করা হয়েছিলোঃ
প্রশ্নঃ তাবলীগ জামাত সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? এদের সাথে কোন তালিমে ই’লম বা অন্য কেউ আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে বের হতে পারে কি?
উত্তরে শায়খ আলবানি রহঃ বলেনঃ “তাবলীগ জামাত আল্লাহর ক্বুরআন এবং রসূলের সুন্নাহর তরীকার উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এবং আমাদের সলফে সালিহীনদের পন্থার উপর নয়। অবস্থা যখন এই, তখন তাদের সাথে বের হওয়া জায়েজ হবে না। কেননা এটা আমাদের সালফে সালিহীনদের (সাহাবাদের) তাবলীগের পদ্ধতির পরিপন্থী। দাওয়াতের কাজে বের হবেন আলেম বা বিদ্বান ব্যক্তি। আর এরা যারা বের হচ্ছে, তাদের উপর অবশ্য করণীয় হচ্ছে, প্রথমে নিজের দেশে জ্ঞান শিক্ষা করা, মসজিদে মসজিদে জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করা, যাতে করে যারা দাওয়াতের কাজ করবে এমন আলেম তৈরী হয়। এ অবস্থায় তালিবে ইলমদের উচিত যেন এদেরকে তাদের দেশেই কুরআন-হাদীস শিক্ষার জন্য আহবান জানায়। মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত তাবলীগীরা কুরআন ও সুন্নাহকে তাদের মূলনীতি হিসাবে গণ্য করে না। বরং তারা এই দাওয়াতকে বিভক্ত করে ফেলেছে। এরা যদিও মুখে বলে যে, তাদের দাওয়াত কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক তা নিছক মুখের কথা, তাবলিগিদের একক কোন ‘আক্বীদা’ (বিশ্বাস) নেই যা তাদেরকে একত্রিত করতে পারে। এজন্যই দেখা যায় তাবলিগ জামাতের লোকেরা হল সূফী ও মাতুরিদী, আশায়িরীর আর, আশারি-মাতুরিদিরা তো কোন মাযহাবেই নেই। এর কারণ হচ্ছে তাদের আক্বীদাহ বিশ্বাস হচ্ছে জট পাকানো। তাবলিগ জামাতের লোকদের রয়েছে স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাব। এদের জামাত প্রতিষ্ঠার প্রায় অর্ধশত বছর পার হয়ে গেল, কিন্তু এত লম্বা সময়ের পরও তাদের মাঝে কোন আলেম তৈরী হলো না। আমরা এজন্যই বলি আগে নিজেরা জ্ঞানার্জন করো, তারপর একত্রিত হও, যেন একত্রিত হওয়া যায় নির্দিষ্ট ভিত্তির উপর, যাতে কোন মতভেদ থাকবে না ।
তাবলিগ জামাত বর্তমান যুগে সূফী মতবাদের ধারক ও বাহক একটি জামাত। এরা মানুষের চরিত্র সংশোধনের দাওয়াত দেয় কিন্তু মানুষের আক্বীদা-বিশ্বাসের সংস্কার ও সংশোধনের জন্য দাওয়াত দেয় না। (শিরক বিদাত মুক্ত) আকিদা সংশোধনের ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। কেননা তাদের ধারণা মতে, মানুষকে সহীহ আকদার দাওয়াত দলে মানুষের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হবে। জনাব সাআ’দ আল-হুসাইন ভাই এবং ভারত-পাকিস্তানের তাবলীগ জামাতের মুরব্বীদের মাঝে বেশ কিছু পত্র যোগাযোগ হয়। এর দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাবলিগ জামাতের লোকেরা ওয়াসীলা, উদ্ধারকারী (ইস্তিগাসা) এবং এ ধরনের অনেক (শিরকি)ধারণাকে সমর্থন করে। প্রত্যেক তাবলীগীকে চারটি তরীকার যেকোন একটী ভিত্তিতে বাইয়াত গ্রহণ করতে হয়। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে, এদের প্রচেষ্টায় অনেক মানুষই আল্লাহর পথে ফিরে এসেছে। বরং, এদের সাথে বের হবার জন্য কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার জন্য কি এটা যথেষ্ট নয়? এ ব্যাপারে আমি বলছি যে, এ ধরণের কথা আমরা অনেক শুনেছি এবং জানি, সূফীদের কাছে থেকে অনেক ঘটনাই জানি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি শাইখের আক্বীদাহ ফাসিদ হয়, হাদীস জানে না বরং লোকজনের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে এতদ্বসত্ত্বেও অনেক ফাসিক লোক তার হাতে তাওবাহ করে। যে দলই ভাল বা কল্যাণের দিকে ডাকবে অবশ্যই তার কিছুনা কিছু অনুসারী পাওয়া যাবেই। কিন্তু আমরা দৃষ্টি দিবো যে, সে কিসের দিকে আহবান করছে? সে কি মানুষকে কুরআন, সুন্নাহ এবং সালফে সালিহীনের আক্বীদার দিকে ডাকছে এবং কোন মাযহাবের ব্যাপারে কোন রকম গোঁড়ামী করে না এবং যেখানেই সুন্নাত পায় সেখান থেকেই তার উপর আমল করে। তাবলীগ জামাতের কোন ইলমী তরীকা বা পন্থা নেই। তাদের পন্থা হল স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে তার জন্ম হয়েছে। এরা সব রঙেই রঙ্গীন হয়।”
উৎসঃ ইমারতী ফতওয়া, শায়খ আলবানী, পৃষ্ঠাঃ ৩৮।

তাবীজ ব্যবহার করা যাবে কি ?


তাবীজ ব্যবহার করা যাবে কি ?
প্রশ্ন : অনেকে বলেন, গাছ-গাছড়া তাবীজ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। তবে কুরআনের আয়াত তাবীজ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। এর কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর :কুরআনের আয়াত হৌক বা গাছ-গাছড়া হৌক সকল প্রকার তাবীজ ব্যবহার করাই শিরক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীজ ঝুলালো সে শিরক করল’(আহমাদ হা/১৬৯৬৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৯২; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৯৪)।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদের স্ত্রী যয়নব (রাঃ) বলেন, একদা আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ আমার গলায় সুতা দেখে বললেন, এটা কি? আমি বললাম, ‘সুতা’ যা আমাকে পড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি সেটা ছিঁড়ে ফেললেন। অতঃপর বললেন, তোমরা আব্দুল্লাহ এর পরিবার। তোমরা অবশ্যই শিরক হ’তে মুক্ত। আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই ঝাড়-ফুঁক করা, কোন কিছু ঝুলানো এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা সৃষ্টির জন্য যেকোন মাধ্যম অবলম্বন করা শিরক’(আহমাদ, আবুদাঊদ হা/৩৮৮৩, মিশকাত হা/৪৫৫২)।
ঈসা ইবনু হামযাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি আব্দুল্লাহ ইবনু উকাইমের নিকট গেলাম। তখন তাঁর শরীরে লাল ফোসকা পড়ে আছে। আমি বললাম, আপনি তাবীজ ব্যবহার করবেন না? উত্তরে তিনি বলেন, ওটা হ’তে আল্লাহ এর কাছে পানাহ চাই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন কিছু ঝুলাবে, তাকে তার প্রতি সোপর্দ করে দেওয়া হবে’(তিরমিযী হা/২০০৫; মিশকাত হা/৪৫৫৬)।
সাঈদ ইবনু জুবায়ের (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন মানুষের তাবীজ কেটে দিল, সে একটি গোলাম আযাদ করার সমান নেকী পেল(মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ফাতাওয়া উছায়মীন ৯/১৭৯)।
Note: তবে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত দো‘আ এবং কুরআনের আয়াত দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা জায়েয। যেমন সূরা ফাতিহা, নাস ও ফালাক্ব দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা(বুখারী, মিশকাত হা/২৯৮৫; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৫৩২)।

আর কত করবে একজন মানুষ?

                    

                    আর কত করবে একজন মানুষ?
=======================
►২০০০ সালঃ একজন খৃষ্টান ডাক্তার
পৃথিবীর বুকে
ঘোষণা দিল,"কুরআন মিথ্যা, ইসলাম
মিথ্যা," সাথে তার
প্রমাণ দিলো আর কুরআন থেকে ৩০টি
ভুল বের
করল।
❏ ২০০১ সালঃ কোনো মুসলিম এলো না
তার জবাব
দেয়ার জন্য।
❏২০০২ সালঃ সৌদি আরবের কোনো
মুফতী,
আলেম, শায়েখ এলো না তার জবাব
দিতে।
❏২০০৩ সালঃ দুবাই থেকেও কোনো
পীর উলামা
এলো না তার জবাব দিতে।
❏২০০৪ সালঃ অনলাইনেও এই নিয়ে
কোনো
মুসলিম জবাব দিলো না।
❏২০০৫ সালঃ মারা গেলেন আহমেদ
দিদাত।
❏২০০৬ সালঃ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলীম
দেশ তথা
বাংলাদেশের বিদ’আত-অবিদ’আতী
কোন হুজুর বা
শায়েখও (!) এগিয়ে আসলো না এর
জবাব দিতে।
❏ ২০০৭ সালঃ এই নিয়ে ইসলামের
বিরুদ্ধে সেই
খ্রিষ্টান ডাক্তারের সব অপবাদ নিয়ে
ইসলামের
বিরুদ্ধে বই
লেখা শুরু হলো; ইসলাম নিয়ে তামাশা
বাড়তেই
থাকল।
►► ২০০৮ সালঃ আমাদের পার্শবর্তী
দেশ ভারত, যে
দেশে প্রত্যেক ঘণ্টায় ২৬ জন নারী
ধর্ষিত
হয়, যে দেশে মুসলিমদের কোনো সম্মান
নেই। যে দেশে বাবরি মসজিদ ধ্বংস সহ
ইত্যাদি
ইসলাম বিদ্বেষী ঘটনা ঘটেছে; সে
দেশ
থেকে আসলো এক চিকন শ্যামলা
বর্ণের
লোক। পেশায় একজন ডাক্তার। তিনি
গেলেন ঐ
খ্রিষ্টানের কাছে। অনুষ্ঠিত হলো ৪
ঘণ্টা ২৫ মিনিট
এর বিতর্ক। কুরআনের বিরুদ্ধে ঐ
খৃষ্টানের আনিত
সকল অপবাদের জবাব তো দিলেন-ই সেই
সাথে
বোনাস হিসাবে বাইবেল থেকে
১০০টারও বেশি
ভুল হাতে ধরিয় দিলেন!
এভাবেই তিনি শুরু করলেন এক
নবদিগন্তের
অভিযাত্রা। লোকটি আর কেউ নয়,
আপনাদের সবার
প্রিয় ডঃ জাকির নায়েক। আর আজ কিছু
মুসলিম
এসেছে তার ব্যবচ্ছেদ করতে। তাদের
উদ্দেশ্যে প্রশ্ন শুধু একটাইঃ
-তখন আপনারা কই ছিলেন?
সে একজন মানুষ। তার ভুল হতেই পারে।
তার ভুল
টুকু দেখে কি আবদান টুকুকে ছুরে ফেলে
দিবেন? তার পরিচালনায় একটি টিভি
চ্যানেল আছে।
সেই ইসলামিক টিভিতে কোন
আশালিন কিছু প্রচার
করে না। এমন কি কোন বিজ্ঞাপন
দেওয়া হয় না।
আর কত করবে একজন মানুষ? এখানে
আমাদের
অবস্থান কোথায়?
ডা: জাকির নায়েকের জনপ্রিয়তার
আগে
বাংলাদেশের মানুষ আহমাদ
দিদাতকে পছন্দ করতো।
সেই আহমাদ দিদাত জাকির নায়েকের
দাওয়ার উপর
যে বুৎপত্তি অর্জিত হয়েছে এবং
ধর্মসমূহের
তুলনামূলক বিশ্লেষণের উপর তার যে
পড়াশুনা
তাতে জনাব দিদাত ২০০০ সালের মে
মাসে জাকির
নায়েককে দেয়া এক স্মারক উপহারের
খোদাই-
করে লিখেছিলেন,
-“Son what you have done in 4 years had taken
me 40 years to accomplish – Alhamdullilah.”
যদি জাকির নায়েক ভ্রষ্ট হন, আর তাঁর
দ্বারা যদি
বিশ্বের একশ মানুষ ভ্রষ্টতার দিকে
ধাবিত হয়, তবে
তার দায়ভার কি আপনাদের উপর
বর্তাবেনা? কেন
আপনারা নিজেদেরকে জাকির
নায়েকের মত
গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারছেন না?
আমাদের
কওমী আলেমদের ভিতরে এমন কোন এক
ইসলামী স্কলার কি আছেন, যিনি
জাকির নায়েকের
জায়গায় উপনিত হয়ে বিশ্বব্যাপী
ইসলামের
আলো ছড়াতে পারবেন বা জাকির
নায়েকের মত
বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য হতে পারবেন ?
যদি পারেন জাকির নায়েকের মত
বিশ্বব্যাপী চষে
বেড়িয়ে বুঝিয়ে দিন যে আপনারাই
সত্যের
ধারক... জাকের নায়েক ভ্রষ্ট...!

প্রশ্ন‬ : বর্তমানে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ পালন করার জন্য কিছু লোকের মাঝে উৎসুক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সঠিক হবে কি?



প্রশ্ন‬ : বর্তমানে একই দিনে ছিয়াম ও ঈদ পালন করার জন্য কিছু লোকের মাঝে উৎসুক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শারঈ
দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সঠিক হবে কি?


উত্তর‬ : শরী‘আতের দৃষ্টিতে এটি সঠিক হবে না। কেননা আল্লাহ পাক বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি (রামাযানের)
এ মাস পাবে, সে যেন ছিয়াম রাখে’ (রাক্বারাহ ১৮৫)।
 ‘এ মাস পাবে’ অর্থ এ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে ছিয়াম রাখ ও চাঁদ দেখে ছিয়াম ভঙ্গ কর। যদি চাঁদ তোমাদের নিকটে আচ্ছন্ন থাকে, তাহ’লে শা‘বান ত্রিশ দিন পূর্ণ করে নাও’
(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৯৭০ ‘ছাওম’ অধ্যায়, ‘চাঁদ দেখা’ অনুচ্ছেদ)।

উপরোক্ত দলীলসমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছিয়াম ও ঈদের জন্য চাঁদ দেখা শর্ত। এক্ষণে এই চাঁদ দেখার বিষয়টি অঞ্চল বিশেষের সঙ্গে সম্পৃক্ত, না আধুনিক মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি চাঁদ দেখার সংবাদ পেলেই পৃথিবীর সকল দেশের সকল মুমিনের জন্য তা প্রযোজ্য হবে?

এ ব্যাপারে মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত যুক্তি-তর্ক বাদ দিয়ে ছাহাবায়ে কেরামের আমলকে অগ্রাধিকার দেয়াই যথার্থ হবে।

কুরাইব (রাঃ) বর্ণিত আছারে এসেছে যে, তিনি সিরিয়ায় রামাযানের ছিয়াম রেখে মাস শেষে মদীনায় ফিরে এখানকার
ছিয়ামের সাথে এক দিন কমবেশ দেখতে পান। এ বিষয়ে ইবনু আববাস (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, তোমরা ওখানে কবে চাঁদ দেখেছিলে? আমি বললাম, শুক্রবার সন্ধ্যায়। তিনি বললেন, আমরা এখানে শনিবারে সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছি।
অতএব এখানে আমরা ছিয়াম চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না ঈদের চাঁদ দেখতে পাব’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমরা ৩০ দিন পূর্ণ করব। তাঁকে বলা হ’ল, মু‘আবিয়ার চাঁদ দেখা ও ছিয়াম রাখা কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়? তিনি বললেন, না। এভাবেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দান করেছেন’
 (মুসলিম হা/১০৮৭ ‘ছিয়াম’ অধ্যায়) ।

ইমাম নববী বলেন, এ হাদীছ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, এক শহরের চন্দ্র দর্শন অন্য শহরে প্রযোজ্য নয় অধিক দূরত্বের কারণে
(মির‘আত হা/১৯৮৯-এর ব্যাখ্যা ৬/৪২৮ পৃঃ) ।

উল্লেখ্য যে, সিরিয়া মদীনা থেকে উত্তর- পশ্চিমে এক মাসের পথ এবং প্রায় ৭০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত। সময়ের পার্থক্য মদীনা থেকে ১৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পরে।
চন্দ্র পশ্চিম দিক থেকে আগে উঠে বিধায় সেখানে মদীনার একদিন পূর্বে চাঁদ দেখা গিয়েছিল। মিশকাতের ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, ‘আধুনিক হিসাব মতে পশ্চিম অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলে পশ্চিমাঞ্চলসহ সেখান থেকে অন্যূন ৫৬০ মাইল দূরত্বে পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য ঐ চাঁদ গণ্য হবে। আর যদি পূর্বাঞ্চলে চাঁদ দেখা যায়, তাহ’লে
পশ্চিমাঞ্চলের অনুরূপ দূরত্বের অধিবাসীদের জন্য উক্ত চাঁদ গণ্য হবে’
(মির‘আত ৬/৪২৯) ।

জ্যোতির্বিজ্ঞানের উক্ত হিসাব মতে মক্কায় চাঁদ দেখা গেলে আশপাশের ৫৬০ মাইল পর্যন্ত উক্ত চাঁদ দেখতে পাওয়া সম্ভব। অতএব উক্ত দূরত্বের অধিবাসীগণ উক্ত চাঁদের হিসাবে ছিয়াম ও ঈদ পালন করতে পারেন, সারা পৃথিবীর মানুষ নয়।
অতএব দু’জন মুসলিমের সাক্ষ্য ঐ অঞ্চলের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, যে অঞ্চলে একই দিনে চাঁদ দেখা সম্ভব

 (বিস্তারিত দ্রঃ মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোত্তর জানুয়ারী ২০০৫ প্রশ্ন নং ১/১২১; আগষ্ট ২০১১ প্রশ্ন নং ৩৩/৪৩৩;
আগস্ট ২০১৩ প্রবন্ধ, প্রসঙ্গ : সারাবিশ্বে একইদিনে ছিয়াম ও ঈদ; সেপ্টেম্বর’১৩, দরসে কুরআন : নবচন্দ্রসমূহ) ।

একটি স্কুলের গল্প



প্যারিসের একটি মাসজিদে একদিন একটি ছোট ছেলে প্রবেশ করল, সে ইমামের কাছে গেল আর বললঃ “স্যার, আমার মা আমাকে এখানে আপনার স্কুলে পড়ার জন্য পাঠিয়েছেন।”
“কিন্তু তোমার মা কোথায়?” ইমাম ছেলেটিকে প্রশ্ন করলেন।
ছেলেটি উত্তরে বলল, “তিনি মাসজিদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন” তিনি একজন অমুসলিম।”
ইমাম ছেলেটির মা এর কাছে গেলেন আর জিজ্ঞেস করলেন, “একজন অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আপনি কেন আপনার সন্তানকে একটা ইসলামিক স্কুলে পড়াতে চাচ্ছেন?”
তিনি খুব সহজভাবে বললেনঃ “আমার প্রতিবেশিনী একজন মুসলিম। প্রত্যেকবার যখন তিনি তার সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যান, যাবার সময় তার সন্তানেরা তার হাতে চুমু দেয়। তারা তাকে রাণীর মত সম্মান করে। তার পরিবার সবসময়ই হাসি-খুশি ও সুখী থাকে।
তাই দয়া করে আমার ছেলেকেও আপনার স্কুলে পড়ান, যাতে করে আমার ছেলেও আমার সাথে ঐরূপ আচরণ করতে পারে যেমনটি ঐ মুসলিম মহিলার সন্তানেরা তাদের মা-বাবার সাথে করে।”

ইসলামের সুসভ্য দৃষ্টিতে নারীর পর্দা ও শালীন পোশাকের কয়েকটি শর্ত



  ইসলামের সুসভ্য দৃষ্টিতে নারীর পর্দা ও শালীন পোশাকের কয়েকটি শর্তঃ
১. মুসলিম মহিলা যে পোশাক ব্যবহার পড়বে তাতে যেন হিজাব-পর্দা রক্ষা হয়; অর্থাৎ সেই পোশাক যেন তার সারা দেহকে আবৃত করে। সুতরাং, যে লেবাসে নারীর মাথা ও চুল, ঘাড়, বক্ষদেশ, উদর ও পৃষ্ঠদেশ (যেমন, শাড়ি ও খাটো ব্লাউজে) এবং হাঁটু ও পা (যেমন স্কার্ট, ঘাগরা, ফ্রক, থ্রি-কোয়ার্টার চুজ পায়জাম ইত্যাদিতে) প্রকাশিত থাকে তা গায়ের মাহরাম (যেই পুরুষদের সাথে বিয়ে জায়েজে, তাদের সামনে) পরিধান করা হারাম।
২. নারীদের পোশাক যেন সৌন্দর্যমন্ডিত ও দৃষ্টি-আকর্ষণকারী না হয়। সুতরাং, এমব্রয়ডারি করা আকর্ষণীয়, চকচকে রঙিন বোরকা পরিধান করা জায়েজ নয়।
৩. পোশাক এমন পাতলা যেন না হয় যাতে ভিতরের চামড়ার রঙ নজরে আসে। অতএব কাফের ব্যভিচারী, পতিতা নারী (নায়িকা/গায়িকাদের) অনুকরণে পাতলা শাড়ি, উড়না প্রভৃতি কোন মুসলিম মহিলার ড্রেস হতে পারেনা।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী; যাদেরকে আমি এখনো দেখিনি। (অর্থাৎ তারা ভবিষ্যতে মুসলমানদের মাঝে আসবে।)
প্রথম শ্রেণীঃ (অত্যাচারীর দল) - যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্দারা তারা মানুষদেরকে প্রহার করবে।
দ্বিতীয় শ্রেণীঃ (ফাহেশা নারী) - তারা হচ্ছে সেই নারীদল; যারা কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু কাপড়ে পড়েও বস্তুতঃ তারা উলঙ্গ থাকবে, যারা পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পর পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট থাকবে। যাদের মস্তক (চুল খোপা বেঁধে) উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিটুকুও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।”
৪. এমন টাইটফিট বা আঁট-সাঁট যেন না হয়; যাতে দেহাঙ্গের উচ্চতা ও নীচতা এবং আকার ও আকৃতি কাপড়ের উপরে থেকেও বুঝা যায়। তাই এমন চুস্ত ও ফ্যাশনের লেবাস মুসলিম নারী পরিধান করতে পারে না, যাতে তার শরীরের ভাজ প্রকাশ পায়।
৫. এই লেবাস যেন পুরুষদের পোষাকের অনুরূপ না হয়। সুতরাং প্যান্ট, শার্ট, প্রভৃতি পুরুষদের মত পোশাক কোনো মুসলিম মহিলা ব্যবহার করতে পারে না। যেহেতু পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ থাকে, তাই কোনো নারীর জন্য পুরুষের বেশ ধারণ করা উচিত নয়। রাসূল সা. বলেছেন, “নারীদের বেশধারি পুরুষের উপর অভিশাপ এবং পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ”।
৬. তদ্রূপ তা যেন কাফের মহিলাদের অনুরূপ না হয়। অবশ্য ঢিলে ম্যাক্সি ও শেলোয়ার কামীস এবং তার উপর চাদর বা উড়না; যা মাথার কেশ, বক্ষস্থল ইত্যাদি আচ্ছাদিত করে তা মুসলিম নারীর লেবাস। কেবলমাত্র শেলোয়ার কামীস বা ম্যাক্সি অথবা তার উপর বক্ষে ও গ্রীবায় থাক বা ভাঁজ করা উড়নার লেবাস কাফের মহিলাদের। অনুরূপ শাড়ি যদি সর্বশরীরকে ঢেকে নেয় তবে মুসলিমদের; নচেৎ থাক করে বুকে চাপানো থাকলে তথা কেশদাম ও পেট-পিঠ প্রকাশ করে রাখলে তা কুফফার মহিলাদের লেবাস। আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন ব্যক্তি যেই জাতির অনুকরণ করবে, সে সেই জাতির দলভুক্ত বলে গণ্য হবে”।
৭. এই পোশাক যেন জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ তথা প্রসিদ্ধিজনক না হয়।
৮. লেবাস যেন সুগন্ধিত বা সুরভিত না হয়। রাসুলুল্লাহ সা বলেছেন, যে নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে লোকালয়ে যায়, সে ব্যভিচারিনী নারী।
৯. প্রকাশ যে, নারীদের সাবালিকা হওয়া মাত্রই এই শর্তের পোশাক পরা ওয়াজেব।
---আল্লামাহ, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ।

হটাৎ মরগটি আললাহ আললহ বলে ডাকছে।

বাদুড়িয়া থানার নারায়নপুর একটি বাড়ি মরগ ধরেছিল বেচার জনন হটাৎ মরগটি আললাহ আললহ বলে ডাকছে। প্লিজ সবাই কমেন্ট করে বলুন - সুবহানাল্লাহ !!

vdo link:

https://www.facebook.com/myAllaah/videos/766184566825820/

অন্তর কঠিন হয়ে যায় কেন?

                 অন্তর কঠিন হয়ে যায় কেন?
মুসলিম উম্মাহ আজ যে সব মহাপরীক্ষা ও মহা মুছিবতে পতিত এবং কঠিন ও ভয়াবহ রোগে আক্রান্ তহয়েছে, তন্মধ্যে এমনই একটি রোগ হলো - অন্তর (ক্বালব) কঠিন হয়ে যাওয়া। নিম্নলিখিত কারণে ক্বালব বা অন্তর কঠিন হয়ে যায়:-
১- নামাযের জামা‘আতে হাযির হওয়ার ব্যাপারে অবহেলা ও গাফলতি করা এবং মসজিদে সকাল সকাল না যাওয়া বরং দেরী করা।
২- কুরআনকে পরিত্যাগ করা অর্থাৎ বিনয়-নম্রতা আর মনোযোগ এবং চিন্তা গবেষণাসহকারে কুরআন তেলাওয়াত না করা।
৩- হারাম রুজি যেমন:সুদ, ঘুষ, মাল্টিপারপাস, ইন্স্যুরেন্স এবং বেচাকেনাসহ বিভিন্ন লেনদেনে প্রতারণা ও জালিয়াতি সহ অন্যান্য হারাম পদ্ধতিতে রুজি-রোজগার করার কারণে।
৪- অহংকার, বড়াই, প্রতিশোধপরায়ণতা, মানুষের দোষ-ত্রুটি বা অপরাধকে মাফ না করা, মানুষকে অবহেলা করে নিকৃষ্ট মনে করা, মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।
৫- দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে ঝুঁকে পড়া, দুনিয়া দ্বারা প্রতারিত হওয়া এবং মৃত্যুকে, কবরকে এমনকি আখেরাতকে ভুলে যাওয়া।
৬- যে কোনো বেগানা নারীর দিকে তাকানো হারাম; যা অন্তরকে কঠোর করে দেয়।
৭- দাঁড়ি গজায়নি এখনো এমন সুন্দর ছেলের দিকে অযথা তাকানো হারাম; তাই সেটাও অন্তর কঠোর করে দেওয়ার অন্যতম কারণ।
৮- আমি নিজে প্রতিদিন কি কি খারাপ কাজ করলাম? নিজের সমালোচনা নিজে না করা, বরং মানুষের সমালোচনা করা।
৯- অনেক দিন দুনিয়ায় থাকবো,অনেক কিছুর মালিক হবো এমন ভুল ধারণা মনের ভিতর থাকা।
১০- আল্লার যিকির বেশী বেশী না করে বরং বেশী বেশী কথা বলা, বেশী বেশী হাসাহাসি-তামাশা এবং মশকারী বা মজাক করা।
১১- বেশী খাওয়া-দাওয়া করা।
১২- বেশী ঘুম যাওয়া।
১৩- মানুষের উপর জুলুম করা।
১৪- শরীয়তের কোনো আদেশ-নিষেধ লংঘন হওয়ার কারণ ব্যতীত অন্য কোনো কারণে রাগ করা।
১৫- ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্য ব্যতীত কাফেরের দেশ ভ্রমণে বের হওয়া।
১৬- মিথ্যা, গীবত (পরচর্চা) এবং একজনের কথা অন্যের নিকট গিয়ে বলার মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করা।
১৭- খারাপ মানুষের সাথে উঠাবসাও চলাফেরা করা।
১৮- অন্য মুসলিমকে মনে মনে অথবা প্রকাশ্য হিংসা করা।
১৯- একজন মুসলিমের উন্নতি সহ্য করতে না পারা, বরং তার ধ্বংস কামনা করা।
২০- অন্য মুসলিম ভাইয়ের সাথে শত্রুতা করা, ঘৃণা করা এবং তাকে অপছন্দ করা।
২১- আপনার নিজের বা মুসলিম ভাইয়ের কোনো লাভ বা ফায়েদা ব্যতীত নিজের ও অপরের সময় নষ্ট করা।
২২- ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা না করা এবং ইসলামী শিক্ষা হতে নিজকে দূরে সরিয়ে রাখা।
২৩- জাদুকর, গণক, জোতিষী, তন্ত্রমন্ত্রকারীর নিকট যাওয়া।
২৪- মাদক, নেশাজাতীয় দ্রব্য, বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা, লতা ওয়ালা হুক্কা সহ যাবতীয় তামাক ও তামাকজাত এবং ক্ষতিকর দ্রব্য পান করা।
২৫- সকাল-সন্ধ্যার যিকরসমুহ পাঠ পাঠ না করা।
২৬- গান শুনা, হিন্দী ইংরেজী সহ যাবতীয় অশ্লীল ও নগ্ন, চরিত্রহীন হারাম ফিল্ম দেখা, গল্প-উপন্যাস পড়া ও পতিত (খারাপ) চটি পত্রিকা ম্যাগাজিন পাঠ করা।
২৭- আল্লাহর নিকট সর্বদা গুরুত্বসহকারে দো‘আ না করা।

সর্বশেষ, অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়ার চিকিৎসা হচ্ছে উপরে বর্ণীত বদ চরিত্র ও খারাপ আমলগুলো ত্যাগ করা এবং এর বিপরীত নেক আমলগুলো বেশী করে করা।
(by Arif Ahmed)

ঈদের দিনে রাখিও মোদের স্মরণে

            
             ঈদের দিনে রাখিও মোদের স্মরণে

আল্ হাম্ দু লিল্লাহ্ , ওয়াস্ স্বালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ্ , আম্মা বাদ:
ঈদ আসছে, খুশির মুহূর্ত আসছে, আসছে আনন্দঘন সময়। কিছু দিনের মধ্যে তা আমাদের নিকট এসেও যাবে। পশ্চিমাকাশে নব চন্দ্র উঁকি দিতেই আমরা অনেকে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠবো। রাত্রিতে ঈদের দিনের কর্মসূচী তৈরি করে নিব। সেই দিনের আগমনে সমাপ্ত হবে এ বছরের মুবারক রামাযান মাস। আমরা সানন্দে সাজ-সকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বেশ-ভুষায়, আতর-পারফিউম লাগিয়ে, সবান্ধবে ও সপরিবারে উপস্থিত হবো ইদগাহে। পরি-অপরিচিত সবার সাথে শুরু হবে সালাম-মুসাফাহা এবং কোলাকুলি। আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতে মুখরিত হবে ঈদগাহ প্রাঙ্গণ। শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতে সবাই বাসায় ফিরবো। সিমাই দিয়ে শুরু হবে খাবার আয়োজন। রকমারি খাবারে ভরে থাকবে অনেকের দস্তরখান। অতঃপর শুরু হবে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা-স্বাক্ষাৎ। চলবে উপহার বিনিময়। এই আনন্দ মুহূর্ত মলিন হতে হতে অতিবাহিত হয়ে যাবে কয়েকদিন।
কিন্তু এই সময়ে পৃথিবীর বহু স্থানে এমন কিছু মুসলিম ভাই আছেন যাদের স্মরণ রাখা আমাদের ঈমানী ও নৈতিক কর্তব্য। নচেৎ আমরা তাদের সাথে ইনসাফকারী হব না। তাদের খুশিতে শরিককারী তো দূরের কথা তারা যে আমাদের ভাই, তারা যে দ্বীন তথা মানবতার অটুট অঙ্গ এই স্বীকৃতিটাও দেওয়া হবে না।
• যখন আমরা ঈদের খুশিতে ডুবে থাকবো, তখন আমাদের ঐ সকল ব্যক্তিদেরও স্মরণ করা উচিৎ যারা এই রামাযান মাসেই আমাদের সাথে ছিল, আমাদের সাথে তাদেরও ঈদ করার কথা ছিল কিন্তু ঈদ আসার পূর্বেই তারা এই ধরাধম ত্যাগ করেছে। কিংবা অনেক দিন পূর্বেই তারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আজ আমরা ঈদ উদযাপন করছি কিন্তু তারা অনুপস্থিত। তাদের স্থানটা আমাদেরও হতে পারতো। কিন্তু আল্লাহ আমাদের সুযোগ দিয়েছেন।
আল্লাহ গো! তোমারই সমস্ত প্রশংসা যতক্ষণ তুমি সন্তুষ্ট না হও। আবার তোমারই প্রশংসা যখন তুমি সন্তুষ্ট হবে। অতঃপর সন্তুষ্টির পরেও তোমারই প্রশংসা।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মৃতদের ক্ষমা কর এবং সমস্ত মুসলিমের মৃতদের ক্ষমা কর। তাদের প্রতি রহম কর। তাদের জান্নাত নসীব কর। আমীন!
• যখন আমরা সুস্থ-সবল শরীরে সানন্দে ঈদ উদযাপন করবো, তখন আমাদের স্মরণ করা উচিৎ সেই সমস্ত ভাইদের যারা অসুস্থতার কারণে আমাদের সাথে ঈদগাহে উপস্থিত হতে পারেনি। যারা হাসপাতালের বেডে কিংবা বাসার খাটে পীড়া যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে আছে। হয়ত: কেউ সপ্তাহ ধরে, কেউ মাস ধরে আর কেউ বছর বছর ধরে এই অবস্থায় এপাশ ওপাশ করছে। তাদেরও তো আমাদের সাথে ঈদ করার ইচ্ছা হয়। আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থ রেখেছেন নচেৎ আমরাও তাদের স্থানে হতে পারতাম।
আল্লাহ গো! তুমি আমাদের এবং সারা জগতের অসুস্থদের আরোগ্য দান কর। আমীন।
আমাদের কর্তব্য হবে, যেন আমরা এই দিনে তাদের দেখা-স্বাক্ষাৎ ও সেবা-শুশ্রুষা, করি তাদেরকে তাদের প্রয়োজনীয় ও পছন্দনীয় আহার ও হাদিয়া প্রদান করি।
• আমরা যখন নিরাপদে আশঙ্কা মুক্ত শান্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছি, তখন আমাদের তাদের স্মরণ করা উচিৎ যারা শত্রুর রাইফেল ও বন্দুকের গুলির ভয়ে এবং ট্যাঙ্কের ভয়ঙ্কর দাপটে নিজ গৃহে আবদ্ধ। বাইরে বের হওয়াটা যাদের জন্য জীবনের হুমকি। যারা ধারাবাহিক যুদ্ধে নিজ পরিবারের আপনজনদের হারিয়েছে। কেউ কলিজার টুকরা সন্তান হারিয়েছে, কেউ পৃথিবীর বড় ধন পিতা-মাতা হারিয়ে অনাথ হয়েছে, কেউ সহধর্মিণী স্ত্রীকে হারিয়েছে, কেউ জীনব সাথী স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয়েছে, কেউ কঠোর পরিশ্রমে সঞ্চিত নিজের মূল্যবান মাল-সম্পদ লুণ্ঠন হতে দেখেছে এবং কেউ অতি কষ্টে নির্মিত স্বপ্নের বাসস্থান চোখের সামনে ধূলিসাৎ হতে দেখেছে। মাথা গোঁজানোর স্থান নেই তাই ফুটপাথে গাছের নিচে পলিথিন ও তিরপল দিয়ে নিজ নীড় নির্মাণ করেছে। তাদের করুণ অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে মনে পড়ে গেল কিছু দিন পূর্বে খবরে প্রকাশিত এক ফিলিস্তিনী মায়ের ঘটনা। যখন সে ফুটপাথে তার সন্তান জন্ম দেয়, তখন সে তার আদরের কোচি শিশুর মুখের দিকে হতাশা ও বেদনা মিশ্রিত মায়াবী নজরে তাকানোর সময় বলছিল: [কিছু মনে করো না মা! কারণ আমার মাও আমাকে এই ফুটপাথেই জন্ম দিয়েছিল। আজ তুমিও ফুটপাথেই জন্ম লাভ করলে। ফুটপাথই আমাদের ভাগ্য।]
আজ ফুটপাথেই তাদের ঈদ। ফুটপাথেই তাদের আনন্দ! আমাদের অবস্থাও তাই হতে পারতো কিন্তু আল্লাহ আমাদের শান্তিতে রেখে ঈদ পালন করার তাওফীক দিয়েছেন। তাই তাঁরই সকল প্রশংসা। আল্লাহ তুমি তাদের দেশে শান্তি দাও! তাদের অন্ন-বস্ত্র দান করো। আমীন।
• আমরা যখন নতুন জামা-কাপড় ও সুন্দর বেশ-ভুষায় সজ্জিত হয়ে ঈদগাহে নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবো এবং নামায শেষে বাসায় ফিরে আদরের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের ঈদের উপহার প্রদান করবো এবং তাদের সাথে কুশল বিনিময় করবো, তখন আমাদের স্বরণে থাকা উচিৎ যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ বর্মার মুসলিম পরিবাররাও এমনই প্রত্যাশা করে। কিন্তু চোখের সামনে রাস্তা-ঘাটে এবং আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা আপন জনদের লাশ দেখলে ঈদ উদযাপন করা যায় কি? দা, কুড়াল ও ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত শরীরে ঈদ পালন করা যায় কি? এর পরেও ঈদের নামায পড়লে তারা ফিরবে কোথায়? কারণ হায়না বৈদ্ধরা তাদের তো নিজ গৃহে হত্যা করে এবং বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের কুড়ো ঘরগুলিকেও আগুন দিয়ে ধু ধু করে জ্বালিয়ে দিয়েছে। যেন পুনরায় তারা বাসায় না ফিরে আর ফিরলেও যেন নিজের সুপরিচিত জম্মস্থানটিও চিনতে না পারে। প্রাণে বেঁচে কিস্তী ও ডিঙ্গীতে চেপে যারা প্রতিবেশী মুসলিম ভাইর দেশে ঠাঁই পাবার বড় আশা নিয়ে কিনারায় এসেছিল, তখন তারা দেখতে পেল আর এক অবিশ্বাস্য নিষ্ঠুর দৃশ্য। দেখলো তাদের নৌকা থেকে হাত ধরে স্থলে তুলার বদলে সেই দেশের আরমীরা তাদের দিকে বন্দুকের নালা পেতে আছে। খবরদার! কেউ যেন আমাদের দেশে পা না ফেলে নচেৎ গুলি করে দেব। এটা মানব নামের দানব জাতিসংঘের আদেশ আর আমরা তা কঠোর ভাবে পালন করতে মজা পাচ্ছি। নৌকা থেকে দুই হাত জোড় করে বাংলাদেশের মাটিতে মাথা গোঁজানোর উদ্দেশ্যে এক বিঘত স্থানের ভিক্ষা চাইলেও নৌকার আরোহীদের সমুদ্রের দিকেই ঠেলে দেওয়া হয়। ফিরে যাও, তোমাদের আমরা চিনি না, জানি না। সমুদ্রেই ডুবে মর তাতে আমাদের সামান্য দুঃখও নেই আফসোসও নেই।
হায় মুসলমান! হায় মানবতা! আজ আমরা যদি তাদের স্থানে হতাম। কিন্তু আল্লাহ আমাদের নিরাপদে শান্তিতে রেখেছে তাই তাঁরই শুকরিয়া। এই সময়ে আমাদের যে কোনো ভাবে সেই দুস্থ, নিপীড়িত, নির্যাতিত এবং মজলূম ভাইদের সহযোগিতা করা ও তাদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য ও দায়িত্ব।
• ঈদ উপলক্ষ্যে আমরা যখন রকমারী রুচিকর খাবার ভক্ষণ করছি, তখন আমাদের সেই সমস্ত নিঃস্ব ও দরিদ্র লোকদের কথা স্বরণ করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ, যারা এই খুশির দিনেও অন্য-বস্ত্রের চিন্তা হতে মুক্ত হতে পারেনি তাই এক দিকে দলে দলে লোকেরা যখন নামাযে যাচ্ছে তখন তারা ঈদগাহ কিংবা মসজিদের গ্যাটে নচেৎ রাস্তার পার্শ্বে হাত ও ঝোলা প্রসারিত করে যাতায়েতকারীদের কাছে ভিক্ষাদানের করুণ আবেদন জানাচ্ছে। আনন্দের এই দিনে আমাদের জন্য উচিৎ হবে আমরা যেন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু খাস করে রাখি।
• আনন্দের এই দিনে আমরা যখন নতুন পোশাকাষে সুসজ্জিত হয়ে আনন্দ করার সুমতি পেয়েছি, মিষ্টি-মিষ্টান্ন বিতরণ করার সুযোগ পেয়েছি, মন পছন্দ টেবিল ভরে আহারের সুব্যবস্থা করতে পেরেছি এবং এক অপরের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি, তখন আমাদের পৃথিবীর সেই সকল ভাইর কথা স্বরণ করে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ, যারা চরম দুরভিক্ষের কবলে অনাহারে জীবন যাপন করছে। খাদ্যাভাবে তাদের গোশ্ত শূন্য শরীরে কেবল চামড়ার আবরণ পড়ে রয়েছে। একটি কংকাল এবং তাদের দেহের মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য পরিলক্ষীত হয় না। মনে পড়ে যায়, ইন্টারন্যাট এবং ফেসবুকে বহু চর্চিত এক মাননীয় সউদী মুফিতীর টিভির চ্যান্যালে প্রশ্ন কালে ক্রন্দনের দৃশ্য। সুদুর দুরভিক্ষকবলিত সোমিলিয়ার এক মুসলিম রোযাদার ভাই প্রশ্ন করেঃ শাইখ, আমাদের মধ্যে যদি কারো অবস্থা এমন হয় যে, তার কাছে না তো সাহরী খাওয়ার এক টুকরা রুটি আছে আর না ইফতার করার জন্য এক ঢোক পানি, তাহলে তার রোযা হবে কি? শায়খ এই প্রশ্ন শুনে ডুকরে কেঁদে ফেলেন। পৃথিবীতে মুসলিম ভাইর অবস্থা এমনও আছে! এই রকমও প্রশ্ন হতে পারে! সাহরীর আহার নেই, ইফতারী করার কিছু নেই!
বন্ধুগণ! কে জানে হয়তঃ তারা আজ আবারও আমাদের কাছে প্রশ্ন করেঃ শায়খ! যদি ঈদগাহে যাবার জন্য জামা না থাকে এবং ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে সিমাই খাবার না থাকে তাহলে আমাদের ঈদ হবে কি?
• সঙ্গত কারণে পৃথিবীর হাফ সেঞ্চুরিরও বেশি সংখ্যায় মুসলিম শাষকদের অবস্থা মনে পড়ে যাচ্ছে, আজ মুসলিম জাতি ও মুসলিম ভাইদের উপর যখন বর্বর নির্যাতন চলছে তখন জাতির উদ্দেশ্যে আপনাদের একটু বিবৃতিও আসে না। খবরের পাতায় এক লাইন মন্তব্যও থাকে না। টিভির পর্দায় এক বাক্যের বক্তব্যও শোনা যায় না। আসলে এটাই কি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ধ্বজা ধরা চেয়্যার! যেই আষণে আপনারা অধিষ্ঠিত তার মূল্য, ক্ষমতা ও দায়িত্ব কি এতটুকু?!
• ঈদ উদযাপনের এই খুশির মুহুর্তে যখন আমরা এক ময়দানে সুন্দর সুন্দর জামা-কাপড় পরে একত্রিত হয়েছি, তখন আমাদের সেই দিনের স্বরণ করা উচিৎ যেই দিন মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট নগ্ন পা ও বস্ত্রহীন অবস্থায় হাশরের ময়দানে পুনরুত্থিত হব। আল্লাহ বলেনঃ “সে দিন মানুষ পলায়ন করবে নিজ ভাই, মাতা, পিতা, পত্নী ও সন্তান হতে।” [আবাসা/৩৪-৩৬] সে দিনের প্রস্তুতি নিন কারণ মুমিনের জন্য সেটাই প্রকৃত প্রস্তুতি।
• আল্লাহ তুমি আমাদের সিয়াম , কিয়াম ও যাকাতুল ফিতর কবুল কর। আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা কর । রোযার পরেও রোযার মাসের মতই সৎ কাজ করার তাওফীক দাও। মনে রাখবেন, তারা খুবই মন্দ সম্প্রদায় যারা মহান আল্লাহকে কেবল রামাযান মাসে চেনে, অন্য মাসে চেনে না। কুল্লু আ’ম ওয়া আন্ তুম্ বিখাইর! তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম! ঈদ মুবারক!
দুআর আশাবাদী, আব্দুর রাকীব (মাদানী)
দাঈ, দাওয়াত সেন্টার, খাফজী, সউদী আরব।
তাং ২৭ই রামাযান ১৪৩৩
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব।

ঈদের বিধিবিধান

                         

 

                          ঈদের বিধিবিধান 

আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল

 

بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين. أما بعد:

ভূমিকা: অবারিত আনন্দের বার্তা নিয়ে যখন ঈদের এক ফাঁলি চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে ভেসে উঠে তখন সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। শিশু-কিশোরগণ আনন্দে  উদ্বেলিত হয়ে প্রজাবতীর মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। এই ঈদ আল্লাহর পক্ষ থেকে  একটি বড় নে’য়ামত। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আগমন করে দেখলেন, মদীনাবাসী খেলা-ধূলার মধ্য দিয়ে দুটি দিবস উদযাপন করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কি? তারা বলল, এ দুটি দিবস জাহেলী যুগে আমরা খেলা-ধুলার মধ্যদিয়ে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, একটি হল, ঈদুল আযহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।” (সুনান আবূদাঊদ, হাদীস নং ৯৫৯ সনদ-সহীহ, আলবানী) (রহঃ) ইসলামী দিক নির্দেশনা অনুযায়ী যদি আমরা  ঈদ ঊদ্যাপন করি তবে একদিকে যেমন ঈদের অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে আমাদের পার্থিব জীবন অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হবে আমাদের পরকালিন জিন্দেগী।
ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ছাড়া অন্য কোন ঈদ-উৎসব পালন করা: উপরোল্লিখিত হাদীস থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইসলামী শরীয়তে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতিরেকে তৃতীয় কোন ঈদ বা উৎসব পালন করার সুযোগ নেই। অথচ আমাদের মুসলিম সমাজে বর্তমানে কত ধরণের ঈদ ও ঊৎসব  জমজমাট ভাবে পালন করা হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যেমন, ঈদে মিলাদুন নবী বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম উৎসব। বরং এটাকে ‘সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ বলে জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে। যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের  সুস্পষ্ট বিরোধী। অনুরূপভাবে তথাকথিত পহেলা বৈশাখ, খৃষ্ট নববর্ষ, এপ্রিল ফুল, বড় দিন (Xmas Day), ইত্যাদি অগণিত  উৎসব আমদের মুসলানগণ অবলিলায় পালন করে যাচ্ছে কিন্তু একবারও চিন্তা করে দেখে না যে, আসলে এগুলোর উৎস কোথায়? এসব মূলত: হিন্দু ও খৃষ্টানদের থেকে আমদানিকৃত সংষ্কৃতি যার সাথে মুসলমানের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে গেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (আবূদাউদ হাদীস নং ৩৫১২, সনদ-সহীহ, আলবানী)
 ইসলাম স্বীকৃত দুটি ঈদ ছাড়া অন্য কোন ঈদ বা উৎসব পালন করা, তাতে অংশগ্রহণ করা বা সে উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ইসলামের সরল-সোজা, সুন্দর ও আলোকময় পথ ধরে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
ঈদের প্রকৃত অর্থ কি: শুধু দামী পোশাক, রঙ্গিন জামা, হরেক রকম সুস্বাদু  খাবার আর নানা ধরণের আনন্দ-উৎসবের নাম ঈদ নয়। ঈদের উদ্দেশ্য কি তা আল্লাহ তা’আলা নিন্মোক্ত আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন:
﴿وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾
 “আর যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্যে তোমরা আল্লাহর মমত্ব প্রকাশ কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা হও ।” (সূরা বাকারাঃ ১৮৫) এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, ঈদের উদ্দেশ্য হল দুটি:
  • ১) আল্লাহর বড়ত্ব মমত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা।
  • ২) আল্লাহ যে নেয়ামত দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা।
ঈদ সংক্রান্ত কতিপয় বিধান: নিন্মে আমরা অতি সংক্ষেপে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ঈদ সংক্রান্ত কতিপয় বিধান আলোচনা করার চেষ্টা করব যাতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে আমরা আমাদের ঈদ উদযাপন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
১) ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ: প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা এ দু দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন।” (বুখারী হাদীস নং ১৮৫৫)
২) ঈদের রাত থেকে তাকবীর পাঠ করা: ঈদের রাতের সূর্য ডুবার পর থেকে আরম্ভ করে ঈদের নামায পড়া পর্যন্ত এ তাকবীর পড়তে হবে। পুরুষগণ মসজিদ, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট তথা সর্বত্র উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করবে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ঈদের আনন্দ প্রকাশ করা হয় অন্যদিকে আল্লাহর আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তাকবীর পড়ার নিয়ম হল, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।”
৩) ঈদ উপলক্ষে পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা: মুসলমানগণ পরস্পরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করাতে অসুবিধা নেই। কারণ সাহাবীগণ ঈদ উপলক্ষে তা করতেন। তারা এই বলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতেনتَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ  “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং আপনার (ইবাদত-বন্দেগী) কবুল করুন। (বায়হাকী (২/৩১৯)-সনদ হাসান)।
৪) ভালো পোশাক ও ভালো খাবারের আয়োজন করা: ঈদ উপলক্ষে যথাসম্ভব পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো খাবার ও সুন্দর পোশাক দেয়ার ব্যবস্থা করা উত্তম। তবে অপচয় যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। অনুরূপভাবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা কর্তব্য। সেই সাথে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখতে হবে। দরিদ্রদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। যাতে ঈদের আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত না হয়।
৫) ঈদের নামাযের প্রতি যত্মশীল হওয়া: ঈদুল ফিতরের নামায বিলম্বে পড়া সুন্নত। যাতে ঈদের দিন সকালবেলা ফিতরা বণ্টন করার সময় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার নামায তাড়াতাড়ি পড়া সুন্নত।
৬) গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: নামাযে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে। তারপর সুগন্ধি ব্যাবহার করে ও সাধ্যানুযায়ী সবচেয়ে সুন্দর কাপড় পরিধান করে ঈদগাহ অভিমুখে যাত্রা করবে। তবে কাপড় পরিধান করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেন পুরুষের কাপড় টাখনুর নিচে না যায়। কেননা, পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা হারাম। আর মহিলাকে তার সর্বাঙ্গ আবৃত করতে হবে এবং রূপ-সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা মহান আল্লাহ বলেন:
وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ الآية
“আর তারা (মহিলাগণ) তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না তাদের স্বামী, পিতা,স্বামীর পিতা…..ছাড়া অন্যের নিকট।” (সূরা নূর: ৩১)
৬) ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাওয়া: ঈদুল ফিতরে ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাওয়া সুন্নত। আনাস (রা:) বলেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটা খেজুর না খেয়ে ঈদের মাঠে যেতেন না। আর তিনি তা বেজোড় সংখ্যায় খেতেন।” (বুখারী)। পক্ষান্তরে ঈদুল আযহায় তিনি ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছুই খেতেন না। ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে নিজের কুরবানীর গোস্ত খেতেন।
৭) মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া: মহিলাদেরকে সাথে নিয়ে  ঈদের নামায পড়তে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন:
 ((لِيَخْرُجْ الْعَوَاتِقُ ذَوَاتُ الْخُدُورِوَالْحُيَّضُ وَيَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ الْمُصَلَّى وَلْيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُؤْمِنِينَ))
 “কর্তব্য হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা; এমন কি ঋতুবতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে। তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ নামাযের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ এবং মুমিনদের দু’আতে শরীক হবে।” (বুখারীঃ হাদীস নং ৯২৭)
এ সুন্নত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় আজো প্রচলিত আছে। সুতরাং যে সব এলাকায় তা চালু নেই সেসব স্থানের সচেতন আলেম সমাজ এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের কর্তব্য হল, আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে মহিলাদেরকেও ঈদের এই আনন্দঘন পরিবেশে অংশ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য এগিয়ে আসা। তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ইত্যাদি যাতে না ঘটে তার জন্য আগে থেকে সকলকে সচেতন ও সাবধান করা জরুরী। মহিলাগণ যখন বাড়ি থেকে বের হবে সর্বাঙ্গ কাপড় দ্বারা আবৃত করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
(((أَيُّمَا امْرَأَةٍ  اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَة))ٌ
“যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে অন্য মানুষের নিকট দিয়ে গমন করার ফলে তারা তার ঘ্রাণ পেল সে মহিলা ব্যভিচারিণী।” (নাসাঈঃ হাদীস নং ৫০৩৬)
৮) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা: পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা এবং ভিন্ন পথে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসা সুন্নত। (বুখারীঃ হাদীস নং ৯৩৩)
ঈদের নামায:
ক. ঈদের নামাযে আযান ও একামত নেই: জাবের ইবনে সামুরা (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একবার নয় দুই বার নয় একাধিক বার ঈদের নামায পড়েছি তাতে আযান ও একামত ছিল না।” (সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১৪৭০)
খ. ঈদের নামাযের আগে বা পরে নফল নামায পড়া শরীয়ত সম্মত নয়।
গ. সর্বপ্রথম ঈদের নামায হবে তারপর খুতবাঃ আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের মাঠে গিয়ে সর্বপ্রথম নামায আদায় করতেন তারপর জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ওয়ায করতেন, কোন উপদেশ থাকলে উপদেশ দিতেন বা কোন নির্দেশ থাকলে নির্দেশ দিতেন। আর জনগণ নামাযের কাতারে বসে থাকতেন। কোথাও কোন বাহিনী প্রেরণের ইচ্ছা থাকলে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেন অথবা অন্য কোন নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করলে তা জারী করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯০৩)
ঘ. রাকাত সংখ্যা: ঈদের নামায দু রাকাত। (বুখারী, হাদীস নং ১৩৪১)
ঙ. তাকবীর সংখ্যা: তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া প্রথম রাকাতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবীর।
عن عَائِشَة أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى فِي الْأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ وَفِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا…قَالَ سِوَى تَكْبِيرَتَيْ الرُّكُوعِ
“আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার প্রথম রাকাতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবীর দিতেন।” অন্য সনদে আছে, উল্লেখিত তাকবীরগুলো রুকুর তাকবীর ছাড়া। (আবূদাঊদ হাদীস নং ৩৭০)
চ. ঈদের নামাযে কেরাআতঃ প্রখ্যাত সাহাবী নুমান ইব্ন বাশীর (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদ ও জুমার নামাযে প্রথম রাকায়াতে ‘সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল আ’লা’ এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাসিয়াহ্’ পাঠ করতেন। (নাসাঈ, হাদীস নং ১৫৫০ সনদ সহীহ-আলবানী) সূরা ক্বাফ এবং সূরা ইক্বতারাবতিস্ সা’আহ্’ পড়ার কথাও হাদীস পাওয়া যায়। (নাসাঈঃ হাদীস নং ১৫৪৯, সনদ সহীহ-আলবানী)
ছ. ঈদের খুতবা শোনা: ঈদের খুতবা প্রসঙ্গে নবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত হলাম। তিনি ঈদের সালাত শেষ করার পর বললেন, আমরা এখন খুতবা দিব। সুতরাং
فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَجْلِسَ لِلْخُطْبَةِ فَلْيَجْلِسْ , وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَرْجِعَ فَلْيَرْجِعْ
“যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে আর যে (খুতবা শোনার জন্য) বসতে চায়  সে বসতে পারে।”
(নাসাঈ, অধ্যায়: দু ঈদ, অনুচ্ছেদ: দুই ঈদের খুতবা শুনা ইচ্ছাধীন বিষয়, হা/ ১৫৫৩, মুস্তাদরাক হাকিম, হা/১০৪৩, ইমাম হাকেম বলেন, হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ তবে তারা তাদের কিতাবে বর্ণনা করেন নি।  ইমাম যাহাবী ইমাম হাকিমের কথায় একমত পোষণ করেছেন। অনুরূপভাবে ইমাম আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আবু দাউদ, হা/১০৪৮, ইরওয়াউল গালীল, হা/৬২৯)
অর্থাৎ জুমার খুতবা শুনার মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। তাই বলে, এটির প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা উচিৎ নয়। কেননা, খুতবার মধ্যে মুসলিম জাতির কল্যাণের জন্য দুয়া করা হয়, ওয়ায-নসিহত করা হয়, বিভিন্ন বিষয়ে করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ে দিক নির্দেশা পেশ করা হয়।
ঈদ ও সামাজিক জীবন: ঈদের আনন্দ নির্মল, পবিত্র এবং অত্যন্ত মধুময়। ঈদ উপলক্ষে যখন নিজ নিজ গৃহে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব একে অপরকে দাওয়াত দেয়, পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করে, একে অপরকে উপহার সামগ্রী আদান-প্রদান করে তখন ঈদের আনন্দ আরও মধুময় হয়ে উঠে। সুদৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধন। মনের মধ্যে জমে থাকা হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ ও তিক্ততা দূর হয়ে পারস্পারিক ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা ও সম্মানবোধ জাগ্রত হয়। জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে বয়ে যায় শান্তির সুবাতাস যা প্রভাতের আলোর মতই স্বচ্ছ, নির্মল ও নিষ্কলুষ।
ঈদ ও পাপাচারিতাঃ ঈদের পবিত্রতা ম্লান হয়ে যায় যখন দেখা যায় ঈদ উৎসব ও ঈদ মেলার নামে অশ্লীলতা-বেহায়াপনার মেলা বসে। তরুণ-তরুণীরা নানারকম আপত্তিকর পোষাকে চলাফেরা করে। একশ্রেণীর উদ্ভট যুবক বাড়িতে, রাস্তার ধারে ও বিভিন্ন ক্লাবে বড় বড় ডেকসেটে অডিও সিডি চালু করে উচ্চ আওয়াজে গান বাজাতে থাকে। সরকারী-বেসরকারি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ অশ্লীল ফিল্ম সম্প্রচার করে। সিনেমা হলগুলোতে নতুন নতুন ছবি জাকজমকভাবে প্রদর্শিত হয়। মনে  হয় এরা যেন এ ধরণের একটি সময়েরই প্রতীক্ষায় ছিল এত দিন!
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা করার পর যে একটা ঈমানী পরিবেশ তৈরি হয়ে ছিল, কুরবানী করার মাধ্যমে যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রতিযোগিতার লিপ্ত হয়েছিল মুসলিম সমাজ তারা কি এসব ক্রিয়া-কাণ্ডের মাধ্যমে তার চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়? এসব অপসংস্কৃতিকে পরিত্যাগ করে আমরা যদি ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে ধারণ করতে পারি তাহলে আমাদের সার্বিক জীবন সুন্দর ও পবিত্রতার আলোক রশ্মিতে ভাস্বর হয়ে উঠবে।
পরিশেষে, কামনা করি ঈদ আমাদের জীবনে রংধনুর মত রং ছড়িয়ে বার বার ফিরে আসুক। আর সে রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠুক আমাদের জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত। ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যাক সকল পাপ ও পঙ্কিলতা। আমীন।
গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী,
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।